গাজায় নতুন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে অবিস্ফোরিত বোমা ও গোলাবারুদ

ইসরাইলি হামলায় গাজার বিধ্বস্ত একটি অঞ্চল
বিদেশে এখন
0

ইসরাইলি বাহিনীর বোমা হামলার মধ্যেই গাজাবাসীর মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ধ্বংসস্তূপে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অবিস্ফোরিত বোমা ও গোলাবারুদ। ইতোমধ্যেই এগুলোর বিস্ফোরণে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হতাহত হয়েছেন অনেকে। তাই জনসচেতনতায় তৎপর আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি ও ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। ১৯০৭ সালের হেগ কনভেনশনের নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এসব অপসারণে সহায়তায় বাধ্য ইসরাইল।

মৃত্যুকূপে পরিণত করেও গাজায় প্রতিনিয়ত বোমা হামলা এবং স্থল অভিযানের মাধ্যমে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরাইল।

ধ্বংসস্তূপের নগরীতে এখন নতুন আতঙ্ক, ইসরাইলি বাহিনীর ছোড়া অবিস্ফোরিত বোমা ও গোলাবারুদ। বেড়িয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ৯শ' কেজি ওজনের মার্ক-৮৪ বোমাসহ অবিস্ফোরিত আরও নানান ধরণের মারণাস্ত্র। বসত-ভিটার ধ্বংসস্তূপ সরাতে গিয়ে এসবের বিস্ফোরণে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেকে।

একজন জানান, যুদ্ধবিরতি চলার সময় বুলডোজার দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করার সময় পরিত্যক্ত বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আমি যেমন আহত হই, তেমনি পাশে থাকা অনেকেই তাদের চোখ এবং হাত হারিয়েছে।

এক শিশু জানায়, আমরা খেলছিলাম। হঠাৎ বিস্ফোরণের পর আহত অবস্থায় আমাদের হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসকরা জানান আমি আমার চোখ হারিয়ে ফেলেছি।

অবিস্ফোরিত বোমাতঙ্কে সময় কাটাচ্ছেন গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসের এ বাড়িটির বাসিন্দারা। ৪৯ বছর বয়সী হানি আল আবদালাহ জানান, আঘাত হানা একটি ক্ষেপণাস্ত্র তার ঘরের ছাদ ভেদ করে অবিস্ফোরিত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে।

একজন বলেন, ‘বিস্ফোরণের ভয়ে পরিবার নিয়ে বাড়িতে থাকা যাচ্ছে না। কারণ যে কোনও মুহূর্তে অবিস্ফোরিত বোমার বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। সেটা তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে হোক বা অন্যকোন কারণে।’

ইসরাইলি আগ্রাসনে হামাস পরিচালিত ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীর বিস্ফোরক প্রকৌশল বিভাগের সব সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায়, গাজাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অবিস্ফোরিত গোলাবারুদ নিয়ে ক্রমেই উদ্বেগের পাল্লা ভারী হচ্ছে।

গাজার বিস্ফোরক প্রকৌশল বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ মেকদাদ বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি শুরুর পর আমরা তাৎক্ষণিকভাবে মাঠে নামি। তবে ইসরাইলি হামলায় আমাদের সব সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এই কাজ এগিয়ে নেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এখন চলমান আগ্রাসনের মধ্যেও আমাদের টিম অবিস্ফোরিত অস্ত্র খুঁজে পেতে ও বাসিন্দাদের বিপদমুক্ত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’

এ অবস্থায় পরিত্যক্ত বিস্ফোরক দ্রব্য থেকে দুর্ঘটনা এড়াতে, জনসচেতনতায় একসঙ্গে কাজ করছে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি। প্রচারণার মাধ্যমে এ বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে শিশুসহ সাধারণ বাসিন্দাদের। এমনকি অবিস্ফোরিত বোমা দেখামাত্র ওই স্থানটি বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

রেড ক্রিসেন্টের একজন বলেন, ‘আমরা গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ম্যুরাল তৈরি করেছি। এই ম্যুরালগুলো বিপদের সচেতনতা স্মারক হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি জীবনরক্ষাকারী সতর্কতাও জোরদার করে।’

আরেকজন জানান, কেউ না বুঝে এটিতে আঘাত করতে পারে। তাই আমরা সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে শিশুসহ সবাইকে সতর্ক করার চেষ্টা করছি।

জাতিসংঘ এবং রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি জানিয়েছে, ১৯০৭ সালের হেগ কনভেনশনের নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যুদ্ধের অবশিষ্টাংশ অপসারণে সহায়তা করতে বাধ্য ইসরাইল। তা মেনে যদি তেলআবিব এ বিষয়ে সহযোগিতাও করে, তাহলে গাজা থেকে অবিস্ফোরিত বোমা সরাতে আনুমানিক ৫০ কোটি ডলার এবং ১০ বছর সময় লাগতে পারে বলেও আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর আগ্রাসন শুরুর পর থেকে গাজায় কর্মরত জাতিসংঘের সংস্থা এবং এনজিওগুলোর দেয়া তথ্য বলছে, পরিত্যক্ত বোমার আঘাতেই প্রাণহানি হয়েছে অন্তত ২৩ জনের। আহত দেড় শতাধিক।

হামাস হামাস-পরিচালিত সরকারি মিডিয়া অফিসের তথ্য বলেছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত অস্ত্র অপসারণে কাজ করতে গিয়ে পুলিশ প্রকৌশল বিভাগের অন্তত ৩১ সদস্য নিহত এবং ২২ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে বোমা নিষ্ক্রিয় করার সময়ও হতাহতের শিকার হয়েছেন বেশ কয়েকজন।

এএইচ