কাশ্মীর ইস্যুতে উত্তেজনার মধ্যেই ভারতের ‘নয়া কৌশল’

পাকিস্তান ও ভারতের পতাকা
বিদেশে এখন
0

কাশ্মীর ইস্যুতে উত্তেজনার মধ্যেই নয়া কৌশল এঁটেছে ভারত সরকারের। পাকিস্তানকে চাপে ফেলতে সব ধরনের আমদানি নিষিদ্ধের পর পরিকল্পনা, প্রতিবেশির জন্য বরাদ্দ আন্তর্জাতিক সব সংস্থার তহবিল বাতিল করিয়ে অর্থনৈতিক চাপ বাড়ানো। এরই মধ্যে পাকিস্তানের সাথে আইএমএফের চুক্তি বাতিলের চেষ্টাও করেছে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতির দেশটি। অন্যদিকে, যেকোনো মুহূর্তে যুদ্ধের শঙ্কায় প্রস্তুতি নিচ্ছে সীমান্তের দুপাশের বাসিন্দারা।

বিতর্কিত কাশ্মীর উপত্যকাকে বিভক্ত করা নিয়ন্ত্রণরেখা এলাকার পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত অংশ, আজাদ কাশ্মীর। সপ্তাহের যুদ্ধ আতঙ্কের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে সুরক্ষিত এলাকায় সরে যাচ্ছেন সেখানকার চাকোঠি গ্রামের বাসিন্দারা।

কয়েক দশকে কাশ্মীর নিয়ে দুটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর অগুনতি সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। চিরবৈরি দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে উঠলে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পরিস্থিতি দেখা আর যুদ্ধের অপেক্ষা করা এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য নতুন নয়।

আরো পড়ুন:

বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘যুদ্ধ হলে পরিবারসহ প্রাণ বাঁচাতে নিজেদের তৈরি করা বাঙ্কারে আশ্রয় নেই। সেনাবাহিনীর কাছে আছি, আমাদের পরিবারও সেখানে সুরক্ষিত। আমাদের টিনের বাড়িঘর বোমা হামলার সময় আমাদের রক্ষা করতে পারবে না।’

আরেকজন বলেন, ‘আমরা লড়াইয়ের উদ্যোগ নিচ্ছি না। যদি ভারত এ উদ্যোগ নেয়, তাহলে প্রতিটি মানুষ জান লড়িয়ে দেবে, তাদের কঠিন জবাব দেয়া হবে। আমাদের পাকিস্তানের মাটিতে এসে কোনো ক্ষতি করার সুযোগ তারা পাবে না।’

সীমান্তের ওপারে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাজস্থানের জয়সলমীরে বারংবার গ্রাম। পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত বলে জরুরি পরিস্থিতিতে আশ্রয় নেয়ার জন্য এ গ্রামেও রয়েছে বাঙ্কার। যুদ্ধের শঙ্কা বাড়ছে থাকায় প্রস্তুতি নিচ্ছেন বারমারের বাসিন্দারাও।

বাসিন্দাদের আরেকজন বলেন, ‘আমরা চিন্তিত নই, ভীতও নই। যুদ্ধ হলে ভারতীয় সেনাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সহযোগিতা করবো। তাদের পথ দেখাবো, পানি-খাবার আর যুদ্ধে যা কিছু লাগে সব দেবো।’

ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের কুপওয়ারা, উরি ও আখনুরসহ বিভিন্ন এলাকায় শনিবারও অব্যাহত আছে দুই দেশের সেনাবাহিনীর গোলাগুলি। টানা নবম দিনের মতো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে নয়াদিল্লি। জবাবে পাকিস্তান কোনোভাবেই সংঘাত উসকে দেয়ার পক্ষে নয় বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ। দুই পরাশক্তির সাথে আলোচনার উদ্যোগ বাড়ানোর সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ।

আরো পড়ুন:

জাতিসংঘে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আসিম ইফতিখার আহমাদ বলেন, ‘পাকিস্তান সংঘাত চায় না। রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে শুরু করে পাকিস্তানের সর্বস্তর থেকে এটা স্পষ্ট করা হয়েছে। কিন্তু একই সময়ে নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় পূর্ণ প্রস্তুত আমরা। ভারত আগ্রাসন চালালে জাতিসংঘ সনদে বর্ণিত আত্মরক্ষার সহজাত ও বৈধ অধিকার প্রয়োগ করবে পাকিস্তানও।’

জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন দুজাররিচ বলেন, ‘দুই পক্ষের সাথেই জাতিসংঘ মহাসচিবের আরও আলোচনা হবে বলে আশা করছি আমরা। দুটি সদস্য দেশের মধ্যে কোনো ধরনের সংঘাত বা উত্তেজনার মধ্যে পরিস্থিতির আরও অবনতির ক্ষেত্রে সংকট নিরসনের উদ্যোগ নিতে মহাসচিবের কর্মকর্তারা সব সময় তৎপর। কিন্তু নিশ্চিতভাবেই তারা তখনই কাজ করতে পারবেন যখন উভয়পক্ষ সেটা চাইবে।’

জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে ২২ এপ্রিলের সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ পর্যটক নিহতের ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। তিন হামলাকারীকে শনাক্ত করে দুজনকে পাকিস্তানি নাগরিক ও সন্ত্রাসী বলে উল্লেখ করে। কিন্তু হামলার ১২ দিনেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ নয়াদিল্লি দিতে পারেনি বলে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামাবাদ; দাবি জানিয়েছে, নিরপেক্ষ তদন্তের।

এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সাথে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু নদীর পানিবণ্টন চুক্তি ও ভারতের সাথে শিমলা চুক্তি স্থগিত করাসহ একে অপরের বিরুদ্ধে নানা ব্যবস্থা নিয়েছে দেশ দুটি। দুই দেশই প্রতিবেশী দেশের বিমান সংস্থাগুলোর জন্য নিজ নিজ আকাশসীমা বন্ধও ঘোষণা করেছে। সবশেষ কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে শনিবার পাকিস্তান থেকে সব ধরনের পণ্য আমদানিও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারত।

আরো পড়ুন:

এর মধ্যেই বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর, কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানকে অর্থনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে এবার আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকেও চাপ দিতে শুরু করেছে ভারত সরকার। এরই মধ্যে প্রতিবেশির জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের অর্থ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে নয়াদিল্লি।

গেল বছর আইএমএফের সাথে ৭০০ কোটি ডলারের আর্থিক চুক্তি নিশ্চিত করে অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত পাকিস্তান; মার্চে ১৩০ কোটি ডলারের নতুন একটি জলবায়ু তহবিলেও অনুমোদন করায়।

৩৫ হাজার কোটি ডলারের পাকিস্তানের অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে এসব তহবিল গুরুত্বপূর্ণ বলেই পাকিস্তান বিশেষ করে আইএমএফের চুক্তিটি বাতিল করাতে চায় দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতির দেশ ভারত।

শুক্রবার পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথেও কথা বলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সেজু