সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরে হামলার ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে কয়েক দশকের পুরোনো সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি বাতিল করে ভারত। দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, সিন্ধু চুক্তি নিয়ে একচুল ছাড় দিতে নারাজ ভারত। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, সিন্ধুর পানি ভারতের স্বার্থেই ব্যবহার করা হবে। পাকিস্তানকে দেয়া হবে না।
১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় সিন্ধু অববাহিকার ৬টি নদী সমানভাগে ভাগ করে দেয়া হয় দুই দেশের মধ্যে। পূর্বাঞ্চলীয় তিনটি নদীর পানি ব্যবহারে অনুমতি পায় ভারত। আর পাকিস্তানকে দেয়া হয় পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি নদী। এসব নদীর পানি ব্যবহার নিয়ে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ভারত ও পাকিস্তান। চুক্তি অনুযায়ী, একতরফাভাবে তা স্থগিত বা বাতিলের ক্ষমতা নেই কোনো দেশের।
পাকিস্তানের অভিযোগ, ভারত নিয়ম লঙ্ঘন করে সিন্ধুচুক্তি স্থগিত করেছে। যার ফলে ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশটির কৃষিখাত। কারণ পানির স্তর এরই মধ্যে নিচে নেমে গেছে। তাই মৌসুমের সময় পর্যাপ্ত পানি না পেলে বাধাগ্রস্ত হবে ফসল উৎপাদন।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘ভারত পানি বন্ধ করে দিলে ফসল রোপণ করতে পারব না আমরা। আবার অসময়ে পানি ছাড়লে বন্যায় তলিয়ে যাবে ফসলি জমি। ফসল কাটার সুযোগও পাব না আমরা।’
পাকিস্তানের কৃষি অর্থনীতি, বিশেষ করে পাঞ্জাব প্রদেশ সিন্ধু পানির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। পর্যাপ্ত পানির অভাবে কমতে পারে ধান, গম ও আখের উৎপাদন। এতে বাড়বে খাদ্য পণ্যের দাম। পানি প্রবাহে সামান্য ব্যাঘাত ঘটলে পুরো কৃষি ও সেচ ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ।
পাঞ্জাব সেচ বিভাগের সাব-ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ বিল্লাল বলেন, ‘পানি ছাড়ার সময় সামান্য এদিক-সেদিক হলে পুরো সেচের সময়সূচি এলোমেলো হয়ে যাবে। ধান রোপণের মৌসুম শুরু হচ্ছে। এ সময়ে এসব জমির জন্য প্রচুর পরিমাণে পানির প্রয়োজন।’
পরিবেশবিদদের মতে, সব বাঁধ বন্ধ করে রাখার সক্ষমতা ভারতের নেই। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে। তবে বড় শঙ্কার বিষয় হল কোনো ধরনের পূর্বাভাস ছাড়া ভারত বাঁধ খুলে দিলে আকস্মিক বন্যা বা খরার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে পাকিস্তানে।
পাঞ্জাবের কৃষি ও পানি ব্যবস্থাপনা মহাপরিচালক রানা তাজামাল হোসেন বলেন, ‘সিন্ধু পানি চুক্তি লঙ্ঘনের ফলে বিদ্যমান পানির প্রবাহ হ্রাস পাবে। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে এটি ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। পাঞ্জাবের কৃষি মূলত চেনাব নদীর ওপর নির্ভরশীল। ৮০ শতাংশ পানির উৎস চেনাব নদী। তাই পানির প্রবাহ কম হলে গোটা কৃষি খাতের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।’
সিন্ধু চুক্তিকে বিশ্বের সবচেয়ে সফল পানিবণ্টন চুক্তির একটি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তবে দুই দেশের বিরোধে এখন তা ব্যর্থ হতে চলেছে।