গত কয়েক দশকের মধ্যপ্রাচ্যের পরাশক্তি ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের নজিরবিহীন এই হামলাকে আকস্মিক ঘটনাই বলা চলে। মার্কিন বৈমানিকরা ৩০ হাজার পাউন্ডের বোমা ফেলে দিয়েছেন ইরানের ভূগর্ভস্থ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে। মার্কিন সামরিক বিশ্লেষকদের দৃঢ় বিশ্বাস, পরমাণু স্থাপনা ধ্বংসে এই হামলাই যথেষ্ট। এই মিশনকে আরও শক্তিশালী করে মার্কিন নৌবাহিনী একটি পরমাণু স্থাপনা লক্ষ্য করে সাবমেরিন থেকে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।
এপির বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বিমানগুলো ঘাঁটি ছেড়ে গেলেও ইরানকে বিভ্রান্ত করতে বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করেছিলো মার্কিন বিমানবাহিনী। গোপনে পরমাণু স্থাপনায় হামলার সিদ্ধান্তের পর লোকসম্মুখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইরানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে দুই সপ্তাহের মধ্যে। কৌশলের অংশ হিসেবে একটি দল মিসৌরি থেকে কয়েকটি বি টু স্টেলথ বোমারু বিমান নিয়ে গেলেন প্রশান্ত মহাসাগরের মার্কিন ঘাঁটিতে। একই সময় সাতটি বি টু স্টেলথ বোমারু বিমান বাঙ্কার বাস্টার বোমা বহন করে নিয়ে গেলো পূর্ব উপকূলে।
সংবাদ মাধ্যম এপির বিশ্লেষণ বলছে, এই হামলায় সিরিয়া, লেবানন আর ইরাকের আকাশের ওপর দিয়ে মার্কিন বোমারু বিমান উড়ে গেলেও দেশগুলো টের পেয়েছে কিনা, সেই তথ্য অজানা। মার্কিন বিমানবাহিনীর দাবি, হামলার সময় ইরানের পক্ষ থেকে কোন প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হয়নি যুদ্ধবিমানগুলোকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতারণা করে ইরানে হামলা করেছে মার্কিন প্রশাসন।
বিমানবাহিনী জানায়, পুরো পরিকল্পনা গুটিকয়েক কর্মকর্তাই জানতেন। গোপনীয়তা রক্ষা করে প্রায় ১৮ ঘণ্টা উড়ার পর প্রতিটি বিমানে দুজন করে বৈমানিক নিয়ে বি টু বোমারু বিমানগুলো ভূমধ্যসাগরের পূর্বে চলে আসে। ইরানের ওপর দিয়ে উড্ডয়নের আগে বি টু বোমারু বিমানগুলোকে নিরাপত্তা দিয়ে নিয়ে যায় মার্কিন অন্য যুদ্ধবিমানগুলো। পেন্টাগন থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, এসময় মার্কিন যুদ্ধবিমানগুলো লেবানন, সিরিয়া আর ইরাকের আকাশপথ ব্যবহার করলেও এখনও অজানা, এই তিন দেশ অবগত ছিলো কিনা। মার্কিন অনেক নীতিনির্ধারকদের দাবি, তারাও তেমন কিছু জানতেন না। প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বেশ গর্বের সঙ্গেই জানান, বি টু বোমারু বিমান পুরো পৃথিবীকে না জানিয়ে ইরান গিয়ে ফিরে এসেছে। ইরাকের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা পূর্বপরিকল্পিত।
আব্দুল করিম খালাফ বলেন, ‘ট্রাম্প প্রতারণা করেছেন। তিনি আগেই বলেছিলেন, ইরানে এখনই কোন হামলা হবে না। অথচ এই হামলার পরিকল্পনা পশ্চিমারা করে রেখেছিলো আরও বহু আগে। ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা পুরো অঞ্চলকে স্পর্শকাতর করে দিয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার জীবন হুমকিতে। এ কারণেই ইরান সমর্থিত ইরাকি মিলিশিয়ারা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সব ঘাঁটিতে এখন হামলা করবে।’
তেহরানের স্থানীয় সময় মধ্যরাতে প্রথম জিবিউ ফাইভ সেভেন বোমা ফেলা হয় মাটির গভীরে অবস্থিত ফোর্দোতে। যুদ্ধক্ষেত্রে এই প্রথম ব্যবহৃত হলো বাঙ্কার বাস্টার। ৩০ হাজার পাউন্ডের একেকটি বোমা মাটির গভীরে গেলে তবেই বিস্ফোরিত হয়। এরপরের হামলা হয় নাতানজ পরমাণু কেন্দ্রে। তৃতীয় বোমা হামলা হয় ইসফাহানে।
মার্কিন কর্মকর্তাদের অপারেশন মিডনাইট হ্যামারের উদ্দেশ্যই ছিলো ইরানের পরমাণু স্থাপনা শেষ করে দেয়া। এই হামলায় কোন তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে প্রথমেই জানিয়ে দিয়েছিলো ইসলামিক প্রজাতন্ত্র। কিন্তু ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহতা নিয়ে এখনও রয়েছে ধোঁয়াশা। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা বলছে, এখনও পাওয়া যায়নি তেজস্ক্রিয়তার আভাস।
এই মিশনে ছিলো ১৪ টি জিবিউ ফাইভ সেভেন বাঙ্কার বাস্টার বোমা, সাতটি বি টু স্পিরিট স্টেলথ বোমারু বিমান, অনেকগুলো তমাহাওম মিসাইল, এছাড়াও অংশ নিয়েছিলো যুদ্ধবিমানসহ শতাধিক বিমান।