গেল ১২ জুন ভারতের আহমেদাবাদে বোয়িং সেভেন এইট এভেন ড্রিমলাইন সিরিজের এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট উড্ডয়নের পরই মেডিকেল কলেজের একটি হোস্টেলের ওপর আছড়ে পড়ে। এতে প্রাণ হারান ২৪০ আরোহীসহ অন্তত ২৭০ জন। অলৌকিকভাবে বেঁচে যান একজন যাত্রী। প্রথমবারের মতো এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হলো বোয়িংয়ের এই মডেলের বিমান।
দুর্ঘটনার এক মাস পর প্রকাশিত প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে ভয়ানক তথ্য বেড়িয়ে এসেছে। উড্ডয়নের মাত্র কয়েক সেকেন্ড পরই ১২ বছরের পুরোনো এই বিমানের ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। যা নিয়ে দুই পাইলটের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দেয়। গেল শনিবার ১৫ পৃষ্ঠার প্রাথমিক তদন্ত প্রকাশ পেয়েছে। যেখানে ককপিটের অডিও রেকর্ডে পাইলট ও কো-পাইলটের কথোপকথন ঘিরে তৈরি হয় রহস্য।
প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর ভারত ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নানা প্রতিক্রিয়া ও বিবৃতি জানিয়েছে। বিমানটির ইঞ্জিন কীভাবে শক্তি হারিয়েছিল তা নিয়ে এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে। যদিও প্রাথমিক তদন্তে পাইলটদের দায়ী করা হচ্ছে বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ।
আরও পড়ুন:
সাবেক পাইলট ও বিমান চালনা বিশেষজ্ঞ এহসান খালিদ বলেন, ‘প্রাথমিক প্রতিবেদনে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো গেছে যে, ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিমানটি দুর্ঘটনায় পড়ে। কীভাবে এবং কেন দুটি ইঞ্জিন শক্তি হারিয়েছে তা খুঁজে বের করতে হবে। কোনো ধরনের মন্তব্য বা সিদ্ধান্তে আসার আগে পাইলটদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত নয়। এখানে পাইলট ইচ্ছা করে জ্বালানি সুইচ বন্ধ করেনি।’
মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং জানিয়েছে, তদন্ত কাজে ভারতের বিমান মন্ত্রণালয় ও এয়ার ইন্ডিয়া পূর্ণ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাইলটের ভুলের চেয়ে যান্ত্রিক ত্রুটির দিকেই মনোযোগ দেয়া উচিত। জ্বালানি সুইচ কীভাবে বন্ধ হয়েছে তা প্রতিবেদনে স্পষ্ট করা হয়নি।
বাকিংহ্যামশায়ার নিউ ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার মার্কো চ্যান বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে প্রতিবেদনের শিরোনামে পাইলটের ভুলকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। যদিও তারা এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু ব্যাখ্যা দেয়নি। তবে এতে পাইলটের ভুল ছিল না। যদিও ককপিট ভয়েস রেকর্ডার পাইলটের ত্রুটির দিকেই ইঙ্গিত দেয়।’
প্রাথমিক প্রতিবেদনে বিমানের ইঞ্জিনে জ্বালানি বন্ধ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ। আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে বোয়িংয়ের সব ধরনের বিমানের জ্বালানি সুইচ ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে ভারতের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি বিমান চলাচলে কঠোরভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়েছে।
তবে প্রাথমিক প্রতিবেদন দেখেই উপসংহারে আসতে রাজি না ভারতের বিমান পরিবহনমন্ত্রী। তার মতে, তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত হবে না।
ভারতীয় বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাম মোহন নাইডু বলেন, ‘আমার বিশ্বাস আমাদের পাইলট ও ক্রুরা বিশ্বের সেরা। তাদের কর্মদক্ষতা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তারা প্রশংসার দাবিদার। তারা বেসামরিক বিমান চলাচলের মেরুদণ্ড। তাই, তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্তে না আসাই উচিত। সবাইকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ পর্যন্ত অপেক্ষা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
গেল এক দশকের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনা ছিল এটি। বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় জড়িত দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে হতাহতদের পরিবার।
এদিকে, ভারতের এই দুর্ঘটনার পর দক্ষিণ কোরিয়াও বোয়িং বিমানগুলোর জ্বালানি সুইচ পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে বিমান সংস্থাগুলোকে।