ইসরাইল যুদ্ধবিরতি চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে, অভিযোগ হামাসের

গাজায় ইসরাইলি হামলার নমুনা
বিদেশে এখন
0

গাজায় অবস্থানরত জিম্মিদের মুক্তিসহ যুদ্ধবিরতির চুক্তি ইসরাইল প্রত্যাখ্যান করেছে বলে অভিযোগ করেছে হামাস। পাশাপাশি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এই সংগঠনটির দাবি, কোনো চুক্তি না হলে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত তারা। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করছেন, শিগগিরই আরও ১০ জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এদিকে, শুক্রবার (১৮ জুলাই) রাতভর ইসরাইলি হামলায় গাজায় আরও ৫১ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এরইমধ্যে ত্রাণ নিতে এসে নিহত হয়েছেন অন্তত ১৪ জন। অন্যদিকে, লেবাননের হিজবুল্লাহকে ট্রাম্প অস্ত্র সমর্পণের যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা প্রত্যাখ্যান করেছেন সংগঠনটির প্রধান নাইম কাসেম।

ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানোর পাশাপাশি এবার গাজার বিভিন্ন শরণার্থী শিবির লক্ষ্য করে অভিযান শুরু করেছে ইসরাইল। শুরুতে গৃহহীন গাজার বাসিন্দাদের জোর করে উপত্যকাটির পশ্চিমে শরণার্থী কেন্দ্রে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। আর তারপরেই ঐ শিবির লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরাইল। গাজায় এমন নৃশংস অভিযানকে জাতিগত নিধন বলছে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও।

স্থানীয়রা বলেন, ‘আমাদের আবারও জোর করে সরিয়ে দেয়া হল। এ শিবিরে এসেছিলাম তাদের নির্দেশেই। ২০ দিনে আমাদের ওপর ৬ বার হামলা হয়েছে। ইসরাইল গাজার সমস্ত বাসিন্দাকে রাফাহতে সরিয়ে নিয়ে পুরো উপত্যকা ধ্বংস করতে চায়।’

গত শুক্রবারও রাতভর হামলা হয়েছে গাজার বিভিন্ন প্রান্তে। চলছে ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলিবর্ষণ। আর বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর তথ্য বলছে, অবরুদ্ধ উপত্যকাটির প্রতি ৩ জনের ১ জন দিনের পর দিন না খেয়ে আছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে পুষ্টিহীনতায় ভুগে গাজার অর্ধেক জনসংখ্যা বিলীন হবে যাবে বলে আশঙ্কা সংস্থাটির।

এমন মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে গোটা বিশ্বের নজর যখন যুদ্ধবিরতির দিকে, তখন ইসরাইলের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ এনেছে হামাস। এক ভিডিও বার্তায় কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র দাবি করেছেন, হামাস একসঙ্গে সব জিম্মিদের মুক্তি দেয়ার মতো একটি সিদ্ধান্তের দ্বারপ্রান্তে থাকলেও ইসরাইল জিম্মি বিনিময়সহ যুদ্ধবিরতির পূর্ণাঙ্গ চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে। আরও অভিযোগ এসেছে, অধিকাংশ জিম্মি ইসরাইলি সেনাসদস্য হওয়ায় তাদের ফিরিয়ে নেয়ার কোনো আগ্রহ নেই নেতানিয়াহু এবং তার উগ্র-ডানপন্থী মন্ত্রীদের।

কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবাইদা বলেন, ‘ইসরাইলের সঙ্গে সমঝোতা আলোচনায় ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদলের ভূমিকাকে আমরা পূর্ণ সমর্থন করি। সব জিম্মিদের মুক্তি দেয়াসহ বিস্তৃত একটি প্রস্তাব দিয়েছিলাম আমরা, কিন্তু ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী ও তার ইহুদিবাদী মন্ত্রীরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা জিম্মিদের নিয়ে একেবারেই উদ্বিগ্ন নন।’

যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলছেন ভিন্ন কথা। ট্রাম্পের দাবি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আরও ১০ জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। তবে কোন পক্ষের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এই মন্তব্য করছেন তিনি তা স্পষ্ট হচ্ছে না।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘গাজা থেকে অধিকাংশ জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অল্প সময়ে ব্যবধানে আরও ১০ জনকে আমরা ফিরিয়ে আনব। আশা করছি দ্রুত সংঘাতের অবসান হবে। মার্কিন প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ দারুণ কাজ করছেন। চুক্তি পাশ করার ব্যাপারে তার জুড়ি নেই।’

এদিকে, গত মাসে ইরানের অন্যতম অক্ষশক্তি লেবাননের হিজবুল্লাহকে অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। শুক্রবার ট্রাম্পের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন হিজবুল্লাহ প্রধান নাইম কাসেম। তিনি দাবি করছেন, অস্ত্র জমা দিলে লেবানন শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে পারবে না আর এই সুযোগ নিতে পারে ইসরাইল। সাফ জানিয়েছেন, কোনো অবস্থাতেই ইসরাইলের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না লেবানন।

এদিকে, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে দেশটিতে মিসাইল হামলা অব্যাহত রেখেছে ইয়েমেনি হুথি যোদ্ধারা। শুক্রবার এমন বেশ কয়েকটি মিসাইল প্রতিহতের দাবি আইডিএফের। পাশাপাশি গাজাবাসীর প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রতি সপ্তাহের মতো শুক্রবারও বিক্ষোভ করেছেন ইয়েমেনিরা। এসময় স্লোগানে স্লোগানে এক টুকরো ফিলিস্তিনে পরিণত হয় রাজধানী সানা।

ইএ