ইসরাইলি অবরোধে অভুক্ত শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারছেন না গাজা উপত্যকার অসহায় বাবা-মায়েরা। যা কারণে ১৭ হাজার শিশু গুরুতর অপুষ্টিতে ভুগছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যার কারণে হাসপাতালে প্রতিনিয়তই বাড়ছে অপুষ্টিজনিত রোগীর ভিড়।
শনিবার (১৯ জুলাই) অনাহারে মারা যাওয়া দুই জনের মধ্যে এক শিশুর বয়স ছিলো মাত্র ৩৫ দিন। জন্মের পর থেকে অপুষ্টিতে ধুঁকতে থাকা শিশুটি আল-শিফা হাসপাতালে মারা গেছে। এমনকি খাবারের অভাবে গর্ভবতী মায়েরা অপুষ্টিতে ভোগার কারণে জন্মের পরই মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে হচ্ছে অসংখ্য শিশুর।
ভুক্তোভুগীরা বলেন, ‘শিশুদেরতো কোনো দোষ নেই। তারা বিশ্বের অন্যান্য শিশুদের মতোই বেড়ে উঠতে চেয়েছিল। পৃথিবীতে সুন্দর জীবনযাপন করতে চেয়েছিল।’
এর বাইরেও যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল সমর্থিত জিএইচএফ ত্রাণকেন্দ্রে ক্ষুধার্তদেরও হত্যা করার এক পৈশাচিক খেলায় মেতে আছে নেতানিয়াহু বাহিনী। জিএইচএফ ত্রাণকেন্দ্রে খাবার আনতে যাওয়া ৩৮ ক্ষুধার্তসহ শনিবার মোট ১১৬ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইল। মানবিক সহায়তা কেন্দ্রগুলোতে চালানো ইসরাইলি হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা।
জাতিসংঘের রাশিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, ‘ক্ষুধার্তদেরও মৃত্যুর দিকে ঢেলে দেয়ার প্রতীক হয়ে উঠেছে ইসরাইলি আগ্রাসন। জিএইচএফ ত্রাণকেন্দ্রে গুলি করেও হত্যা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা মানবিক সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে বসে বসে মানবিক বিপর্যয় দেখতে পারিনা।’
এমনকি অবরোধের কারণে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য দাতব্য সংস্থা দ্বারা পরিচালিত প্রায় ৪০০ ত্রাণকেন্দ্র থাকলেও, খোলা রয়েছে মাত্র চারটি পয়েন্ট। যেখানে ২৩ লাখ গাজাবাসীর চাহিদা মেটানোর মতো নেই সহায়তা সামগ্রী। এতে গাজাবাসী দুর্ভিক্ষের তীব্র ঝুঁকির মুখোমুখি বলে সতর্ক করেছেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব জাগান চাপাগেইন। অবরোধ তুলে নিলে গাজাবাসীর জন্য দুই মাসের খাদ্য সহায়তা দিতে প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে ডব্লিউএফপি।
ডব্লিউএফপির ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর কার্ল স্কাউ বলেন, ‘আমাদের সক্ষমতা আছে। আমরা কমপক্ষে দুই মাসের খাবার পৌঁছে দিতে প্রস্তুত। যদি কোনও অগ্রগতি হয় তার পরদিন থেকেই আমরা এটি করতে পারব।’
এদিকে মার্কিন প্রস্তাবিত ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি এবং মিশর-কাতারের মধ্যস্থতায় জিম্মি চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে দোহায় ইসরাইল-হামাসের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এতে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলি আগ্রাসনে প্রাণহানি বেড়ে ৫৮ হাজার ৭শ' ছাড়িয়েছে। ইতোপূর্বে ইসরাইল যুদ্ধবিরতির শর্ত ভেঙে আগ্রাসন চালানোয় অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি আর সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে গাজার স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস।