ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ছে ইসরাইলি বাহিনী। বেছে বেছে অভুক্তদের ওপর গুলি চালানোর মাত্রা বাড়িয়েছে কয়েকগুণ। রোববার একদিনেই ত্রাণের জন্য অপেক্ষায় থাকা রেকর্ড ৯২ জনসহ ১১৫ অসহায় ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে নেতানিয়াহুর সেনারা।
উত্তরের জিকিম ক্রসিং, দক্ষিণের রাফাহ এবং খান ইউনিসের ত্রাণকেন্দ্রে এই নৃশংস হত্যাযজ্ঞে মেতেছে দখলদাররা। সবচেয়ে বেশি ৭৯ ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যা করেছে জিকিম ক্রসিংয়ের জাতিসংঘের ত্রাণ কনভয়ে। খাদ্য সহায়তা বহনকারী ২৫টি ট্রাকের একটি বহর জিকিম পয়েন্ট অতিক্রম করার কিছুক্ষণ পরেই ইসরাইলি গুলিবর্ষণ ঘটে।
বাসিন্দারা বলেন, ‘সন্তান ও পরিবারের ক্ষুধা নিবারণের জন্য ত্রাণকেন্দ্রে যেয়ে কাফনে জড়িয়ে ফিরে আসে। এই মৃত্যু ফাঁদগুলো বন্ধে এবং মানবিক করিডোরগুলো খুলে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
তারা বলেন, ‘আমরা আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আটা পেয়েছি। এমন পরিস্থিতি হয়ে যে, এখন আমাদের জীবিকা কেবল রক্তের বিনিময়েই পাওয়া সম্ভব। অথচ বিশ্ব শুধু তাকিয়ে দেখছে।’
হত্যাকাণ্ডের মধ্যেই ইসরাইলি অবরোধে খাদ্য সংকটও তীব্র গাজা উপত্যকায়। অনাহারে একদিনেই প্রাণ গেছে ১৯ ফিলিস্তিনির। এর বাইরে ইসরাইলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত অপুষ্টিতে কমপক্ষে ৭১ শিশু মারা গেছে। মানবিক সহায়তার অভাবে ক্ষুধায় মানুষ মারা যেতে শুরু করায় ২০ লাখের গাজাবাসীর হতাশার মাত্রাও তীব্র হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা বলেন, ‘গাজা উপত্যকায় খাবারের অভাবে অপুষ্টিতে ভুগে এই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সমগ্র বিশ্ব, আরব দেশকে মানবতার হাত বাড়িয়ে অন্তত শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছি।’
গাজা উপত্যকায় কোনও শিশু খাদ্য নেই। জন্মের পর বেঁচে থাকার জন্য খাবার না পেয়ে শিশুরা মারা যাচ্ছে।
নাসের হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. ফিদা আল-নাদির বলেন, ‘গাজা উপত্যকার অন্যান্য অংশের মতো নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সও চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ এবং শিশু খাদ্যের তীব্র সংকট। আমরা যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি। তব অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের জীবন দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। অপুষ্টিতে ভোগা রোগীও বাড়ছে।’
অপুষ্টির মাত্রা বাড়ায় ৯০ হাজার নারী ও শিশুর জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন। প্রতি তিনজনের মধ্যে অন্তত একজন কয়েকদিন ধরে না খেয়ে আছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব খাদ্য সহায়তা সংস্থা। এছাড়া গাজা একমাত্র ক্যাথলকি গির্জায় হামলার পর বর্বরতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে পোপ চতুর্দশ লিও।
ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ চতুর্দশ লিও বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার ইসরাইলি হামলায় তিন খ্রিস্টান নিহত এবং অরও অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন। আমি নিহত সবার জন্য প্রার্থনা করছি। পাশাপাশি গাজার বেসামরিক জনগোষ্ঠী এবং উপাসনালয়গুলোর বিরুদ্ধে চলমান ইসরাইলের বর্বর আক্রমণ অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি।’
এ অবস্থায় ইসরাইলকে গাজায় আরও ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকতে অনুমতি দেয়ার দাবি জানিয়েছে ফিলিস্তিনিদের জন্য নিবেদিত জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ। সব গাজাবাসীর জন্য পর্যাপ্ত খাবার থাকা সত্ত্বেও অনুমতি না পাওয়ায় সেগুলো পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।
২০২৩ সালে ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত প্রাণহানি বেড়ে ৫৮ হাজার ৯শ ছাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল নিয়ন্ত্রিত জিএফএইচ ত্রাণকেন্দ্র ছাড়াও জাতিসংঘের ত্রাণকেন্দ্রে সহায়তা আনতে যাওয়াদের ওপরও গুলি চালানোয় ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসার শঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া শিগগিরিই সীমান্ত না খুললে দুর্ভিক্ষের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকিও প্রকট হচ্ছে।