জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের পক্ষে মামলা করার পথ খুললো: আইসিজে

আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)
বিদেশে এখন
0

জলবায়ু পরিবর্তনের দায়ে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে)। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনকে অস্তিত্বগত হুমকি বলেও বর্ণনা করেছেন আইসিজে প্রেসিডেন্ট। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট প্রশ্ন উত্থাপনকারী প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতুসহ আরও অনেক দেশ। আইসিজের এই বর্ণনা জলবায়ু পদক্ষেপের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবে ধুঁকছে পুরো বিশ্ব। বরফ গলে বাড়ছে সমুদ্রের উচ্চতা। ঝড়ো হাওয়া এবং সময় অসময়ে আকস্মিক বন্যায় ভয়াবহ বিপর্যয়ের কবলে পড়ছে বিভিন্ন দেশ।

তীব্র তাপপ্রবাহ ও খরায় হাঁসফাঁস অবস্থা পৃথিবীর আরেক প্রান্ত। এমনকি সবচেয়ে বেশি ইউরোপের হেক্টরের পর হেক্টর এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে দাবানল। পুড়ে তছনছ মানুষের সহায় সম্বল।

গ্রিনহাউজ গ্যাস ও শিল্প-কারখানায় অতিমাত্রায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে কার্বন নিঃসরণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয় উন্নত দেশগুলোকে। এর বিপরীতে জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি হলেও, এটি বাস্তবায়নে খুব একটা গতি না থাকায় কার্যত কোনো সুফল বয়ে আনছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দুটি প্রশ্ন উত্থাপন করে দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতুসহ আরও কয়েকটি দেশ। এরমধ্যে প্রথমটি হলো- বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জলবায়ু দূষণ ঠেকাতে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় দেশগুলো কী কী পদক্ষেপ নিতে বাধ্য? দ্বিতীয়ত, যেসব দেশের কার্বন নিঃসরণ পরিবেশগত ক্ষতির কারণ; ছোট দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর ক্ষেত্রে তাদের ক্ষতিপূরণ বা দায়ভার কীভাবে নির্ধারিত হবে?

এর প্রেক্ষাপটে বুধবার ঐতিহাসিক বর্ণনা তুলে ধরেন আদালত। যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনকে অস্তিত্বের হুমকি বলে অভিহিত করেন আইসিজে প্রেসিডেন্ট। তিনি জানান, এর দায়ে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে। এছাড়া দায়ী দেশগুলোকে অবশ্যই জলবায়ু বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে হবে, তা না করলে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলোকে নির্দিষ্ট মামলায় ক্ষতিপূরণ চাওয়ার পথ তৈরি করে দেবে বলেও সতর্ক করেছেন আদালত।

নেদারল্যান্ডস আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) প্রেসিডেন্ট ইউজি ইওয়াসাওয়া বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মারাত্মক ও বহুমাত্রিক, এটি প্রাকৃতিক প্রতিবেশ ও মানবসমাজ উভয়ের ওপরই গুরুতর প্রভাব ফেলছে। এর পরিণতিই প্রমাণ করে যে এটি এক অস্তিত্বগত হুমকি। তাই দায়ী দেশগুলো জলবায়ু চুক্তি দ্বারা তাদের উপর আরোপিত কঠোর বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে বাধ্য এবং তা না করা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।’

আইসিজের এই সিদ্ধান্ত জলবায়ু বিষয়ক পদক্ষেপের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন ভানুয়াতুর পরিবেশমন্ত্রী রালফ রেগেনভানু।

ভানুয়াতুর জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী রালফ রেগেনভানু বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের উপর আলোচনার জন্য আজকের দিনটি যুগান্তকারী ও মাইলফলক হয়ে থাকবে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো, আইসিজে মানবতার মুখোমুখি সবচেয়ে বড় হুমকি জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সরাসরি কথা বলেছে। আমি মনে করি যে সিদ্ধান্তটি সর্বসম্মত ছিল।’

এদিকে রায় ঘোষণার আগে, এখনই জলবায়ুর ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা চায় বলে আদালতের বাইরে স্লোগান দিতে দেখা গেছে পরিবেশ কর্মীদের। রায়ের আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে আসা হাজার হাজার পৃষ্ঠার নথি পর্যালোচনা করেছেন আইসিজের ১৫ জন বিচারপতি।

ইএ