ভোরে সূর্য উঁকি দিতেই পানির সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের বাসিন্দারা। এক বালতি পানি পাওয়া যেন তাদের কাছে সোনার হরিণ। যার পেছনে ছুটছে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই।
তীব্র পানি সংকটে জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে ওঠেছে কাবুলবাসীর। এ অবস্থায় সম্প্রতি রেশনিং পদ্ধতিতে সরবরাহ করা হচ্ছে পানি। পানির ট্যাঙ্কারের শব্দ কানে আসতেই হুমড়ি খেয়ে পড়েন বাসিন্দারা। কে কার আগে পানির পাত্র ভরবে, তা নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। তবুও চাহিদা মতো পানি পাচ্ছেন না তারা।
বাসিন্দারা বলেন, ‘আমার ১০ সদস্যের পরিবার। প্রতিদিন প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। কিন্তু অর্থের বিনিময়েও চাহিদা অনুযায়ী পানি পাওয়া যাচ্ছে না।’
এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি সকাল ৬টায় স্কুলে যাই। যখন আমি ঘরে ফিরি তখন সহায়তাকেন্দ্র থেকে পানি নিয়ে ফিরতে হয়। এতে ক্লান্ত হয়ে যাওয়ায় হোমওয়ার্ক করতে পারি না।’
২০০১ সালে কাবুলের জনসংখ্যা ছিল ১০ লাখেরও কম। কিন্তু বর্তমানে প্রায় ৬০ লাখে পৌঁছেছে কাবুলের জনসংখ্যা।
পরিস্থিতি এমন দিকে যাচ্ছে, কাবুল খুব শিগগিরই আধুনিক ইতিহাসে প্রথম পানিশূন্য রাজধানী হয়ে উঠতে পারে বলে শঙ্কা করছে অলাভজনক সংস্থা মার্সি কর্পস। সংস্থাটির সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ৬০ লাখের বেশি মানুষের শহর কাবুলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই পানি ফুরিয়ে যেতে পারে। আরও এই সংকট অর্থনৈতিক পতনের দিকেও নিয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং মাটির নিচ থেকে অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২৫-৩০ মিটার নিচে নেমে গেছে। যার কারণে কাবুলের প্রায় অর্ধেক কূপ ইতিমধ্যেই শুকিয়ে গেছে। পানির তীব্র সংকটের পেছনে অপচয়কেও বড় কারণ হিসেবে দেখছেন কর্তৃপক্ষ।
কাবুল পানি সরবরাহ কর্তৃপক্ষের পরিচালক শফিউল্লাহ জাহেদি বলেন, ‘আমরা কয়েক বছর ধরেই পানি সংকটে ধুঁকছি। কাবুলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ার প্রধান কারণ বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই শহরে জনসংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। তৃতীয়ত, অনেক জনগণ পানির অপচয় করেন।’
বছরে ৪ কোটি ৪০ লাখ ঘনমিটার পানি উত্তোলন করা হচ্ছে কাবুলে। যা প্রাকৃতিক উপায়ে মাটির নিচে জমা হওয়া পানির পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি। যদি এই ধারা চলতে থাকে তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে শহরটিতে পানির উৎসগুলো একেবারে শুকিয়ে যেতে পারে। যা রাজধানীর শহরের প্রায় ৩০ লাখ বাসিন্দাকে বাস্তুচ্যুত করতে পারে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও কারখানার বর্জ্যের কারণে জীবাণু ছড়িয়ে কাবুলের ৮০ শতাংশ ভূগর্ভস্থ পানি বিষাক্ত হয়ে ওঠেছে বলেও দাবি মার্সি কর্পসের। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি সংকট পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে কাবুলে পানি ও স্যানিটেশন খাতে ২৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার প্রয়োজন হলেও তহবিল এসেছে মাত্র ৮০ লাখ ডলার।