একদিকে যুদ্ধ বন্ধে শান্তি আলোচনা অন্যদিকে পাল্টাপাল্টি হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। উত্তরাঞ্চলীয় সুমি অঞ্চলে ইউক্রেনের একটি জ্বালানি স্থাপনায় ড্রোন হামলা চালিয়েছে মস্কো। এতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ২ লাখের বেশি বাসিন্দা। জবাবে রাতভর রাশিয়ার অন্তত ছয়টি অঞ্চলে ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। এ সময় ৩৩টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করার দাবি করেছে রুশ সেনারা। এদিকে, বেরিং সাগরের ওপর পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম একটি রুশ বোমারু বিমান টহল দিয়েছে।
এমন অবস্থায় তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনায় বসে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধি দল। বুধবার সন্ধ্যায় ইস্তাম্বুলের সিরাগান প্রাসাদে দুই পক্ষের ৪০ মিনিটের আলোচনায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে দুই পক্ষই ১২শ' করে যুদ্ধবন্দী বিনিময়ে সম্মত হয়েছে। এছাড়া, ৩ হাজার ইউক্রেনীয় সেনার মরদেহ ফেরত দিতে রাজি হয়েছে রাশিয়া। এরইমধ্যে, দুই পক্ষের বন্দী বিনিময় শুরু হয়েছে। বন্দীদের মধ্যে যারা গুরুতর অসুস্থ তাদের মুক্তির বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।
ইউক্রেন জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির জন্য তারা প্রস্তুত। রাশিয়াকে একটি গঠনমূলক ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে কিয়েভ। এছাড়া, যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে আগস্টের শেষ দিকে এরদোয়ান, ট্রাম্পসহ শীর্ষ নেতাদের একটি সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছে ইউক্রেন। যেখানে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের প্রধান রুস্তেম উমেরভ বলেন, ‘ইউক্রেন অগ্রাধিকার দিচ্ছে শীর্ষ নেতাদের অংশগ্রহণে একটি বৈঠক আয়োজনের ওপর। যেখানে উপস্থিত থাকবেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যা হবে কার্যকর যুদ্ধবিরতি ও রক্তপাত বন্ধ করে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ। আগস্টের শেষ দিকে এই বৈঠকের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে রাশিয়াকে।’
জবাবে, রাশিয়া বলেছে, সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার পর কেবল চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারেন পুতিন। শুধু আলোচনার জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট এই বৈঠকে আসবেন না বলে জানিয়েছেন মস্কোর প্রতিনিধি দলের প্রধান।
রাশিয়ান প্রতিনিধিদলের প্রধান ভ্লাদিমির মেদিনস্কি বলেন, ‘বৈঠক আয়োজনের আগে রাশিয়ার চুক্তির শর্তাবলী নির্ধারণ করতে হবে। বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হবে তা জানাতে হবে। এরপরই রাশিয়া এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করবে। শীর্ষ নেতাদের নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কোনো অর্থ নেই।’
এদিকে, ট্রাম্পের ৫০ দিনের আল্টিমেটাম দেয়ার পরও শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানো নিয়ে তোড়জোড় দেখা যায়নি রাশিয়ার মধ্যে। এবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ন্যাটো ও ইউরোপীয় মিত্রদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র কিনে ইউক্রেনে পাঠানোর নির্দেশ দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে একক কর্তৃত্ব নিজের হাতে রাখতে চান ট্রাম্প।
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারলিন লেভিট বলেন, ‘রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ট্রাম্প তার ঘনিষ্ঠ সিনেট সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তবে ট্রাম্প বলেছেন, এ বিষয়ে তিনিই কমান্ডার ইন চিফ। শুরু থেকেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে গভীরভাবে জড়িত আছেন। নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত ট্রাম্প নিজেই নেবেন।’
এর আগে ১৬ মে এবং ২ জুন রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে আরও দুই দফা বৈঠক হয়। সেসব বৈঠকে যুদ্ধবিরতির আলোচনার খুব একটা অগ্রগতি দেখা যায়নি। তবে মধ্যস্থতাকারী দেশ তুরস্কে আশা, আলোচনার মাধ্যমেই যুদ্ধবিরতি অর্জন এবং রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ সম্ভব।