প্রতি বছর পাকিস্তানে শত শত তথাকথিত অনার কিলিং বা পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে হত্যার ঘটনা ঘটছে। তবে এসব হত্যাকাণ্ডের খবর খুব একটা জনসম্মুখে আসে না। এ নিয়ে আইনি পদক্ষেপও খুব কম দেখা যায়। পাকিস্তান ও ভারতের কিছু রক্ষণশীল পরিবারে ব্যভিচারের অভিযোগে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের প্রচলন আছে এখনো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী হয় নারীরা।
গেল মাসে বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে এক নারী ও তার প্রেমিককে গুলি করে হত্যা করে একদল মানুষ। পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের একটি উপজাতীয় পরিষদের রায়ে এই অনার কিলিং হয়। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর শুরু হয় তদন্ত। এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৬ জনকে। বাকিদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেয় বেলুচিস্তান কর্তৃপক্ষ।
বেলুচিস্তান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ফারখান্দা আওরঙ্গজেব বলেন, ‘দেশের আইনে প্রতিটি অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। যে অপরাধের অভিযোগে এই যুগলকে হত্যা করা হয়েছে তার জন্যও শাস্তির বিধান আছে। দেশে আইন আছে, আদালত আছে। কোনোভাবেই আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে এসব বর্বরতা করা যাবে না। বিষয়গুলো কেনো আদালতে তোলা হচ্ছে না তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।’
ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, বেলুচিস্তানের মরুভূমিতে বেশকিছু গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকজন। এসব গাড়িতে করেই এই যুগলকে আনা হয়। এরপর প্রেমিকাকে লক্ষ্য করে তিনটি গুলি ছুড়ে প্রেমিক। ওই নারীর মৃত্যুর পর পুরুষকে গুলি করে হত্যা করে বাকিরা। এই ঘটনা নাড়া দেয় গোটা পাকিস্তানকে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘এটি চরম নৃশংসতা। অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয় ঘটনা এটি। আইনি পদক্ষেপ নিলে বন্ধ হতে পারে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড।’
এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবিতে প্রাদেশিক রাজধানী কোয়েটায় বিক্ষোভে নামে বহু মানুষ। নৃশংসতা বন্ধে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে বিভিন্ন স্লোগান দেয় তারা। এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার সংস্থা ও ধর্মীয় গোষ্ঠী থেকে নিন্দার ঝড় উঠে।
নাগরিক অধিকার আইনজীবী জিবরান নাসির বলেন, ‘পাকিস্তান সরকার, সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক দলগুলো এসব অপরাধের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেনি। ভিডিও ভাইরালের পর তারা নড়েচড়ে বসেছে। ভিডিওতে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, এটি গোপনে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংঘটিত হয়নি। তবুও স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ বা বিচার বিভাগ একেবারেই নিশ্চুপ।’
সোশ্যাল মিডিয়ার তারকা কান্দিল বালুচের হত্যার পর ২০১৬ সালে অনার কিলিং নিষিদ্ধ ঘোষণা করে পাকিস্তান। পরিবারের সদস্যরা ক্ষমা করলে অপরাধীদের মুক্তি দেয়ার বিধান চালু হয়। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, বিল পাস হলেও, তা প্রয়োগে এখনও দুর্বল। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় যেখানে উপজাতীয় পরিষদ এখনও প্রভাব বিস্তার করছে।