সম্প্রতি তীব্র দাবদাহে পুড়ছে ইরাকের বিভিন্ন শহর। বেশ কয়েকটি অঞ্চলের তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইরাকের অনেক প্রদেশে সরকারি ছুটিও ঘোষণা করা হয়। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছেন বাসিন্দারা। সংকট দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ ও খাবার পানির। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনে জাতিসংঘের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় আছে ইরাক।
টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর মোহনায় অবস্থিত ২০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের শাত আল–আরব নদী। একসময় এই নদী তীরবর্তী অঞ্চলে ছিল বিশ্বের বৃহত্তম খেজুর বাগান। সম্প্রতি ইরাকের অন্যতম পানির উৎস শাত-আল আরব নদীর পানিতে বেড়েছে লবণাক্ততা। বাধ্য হয়ে খেজুর চাষিরা এসব জমি ছেড়ে সরে যাচ্ছেন বসরার পশ্চিমের মরুভূমির দিকে।
আরও পড়ুন:
উজান থেকে পানির প্রবাহ কমে যাওয়া, খরা এবং টাইগ্রিস নদীর উজানে তুরস্কের বাঁধ নির্মাণের ফলে ইরাকে পানির সংকট তীব্র হয়েছে। বাঁধের কারণে নদীর প্রবাহ নষ্ট হয়ে মিশছে সমুদ্রের লবণ পানি। এতে উর্বরতা হারাচ্ছে নদী তীরবর্তী জমিগুলো।
বসরা প্রদেশে লবণাক্ততা ও খরায় খেজুর বাগানগুলো পূর্ব থেকে পশ্চিমে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে সেখানেও ভূগর্ভস্থ পানির সংকট তীব্র। লবণাক্ত জোয়ারের পানিতে নষ্ট হচ্ছে খেজুর গাছ এবং বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ফলন।
নদী তীরবর্তী বাগানগুলোতে ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে খেজুর উৎপাদন। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে বাগান প্রতি খেজুর উৎপাদন কমেছে ২ থেকে আড়াই টন। এছাড়া, পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে এখন মৃতপ্রায় বহু গাছ।
বসরা কৃষি অধিদপ্তর জানিয়েছে, অনেক কৃষক এখন ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভর করছে। এতে খেজুর চাষের পাশাপাশি অন্যান্য শাকসবজি উৎপাদনও কমছে।
বসরা কৃষি অধিদপ্তরের পরিচালক ড. জাসেম মোহাম্মদ দামাদ বলেন, ‘বিদ্যমান ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে কৃষকরা এখন উপকৃত হচ্ছেন। সেচের মাধ্যমে পানির ব্যবস্থা করা খেজুর চাষের বিকল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে। আধুনিক পদ্ধতিতে সেচের মাধ্যমে তাদের জন্য পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
সম্প্রতি ইরাকের পানি সংকট নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর পানিও শুকিয়ে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের এপ্রিলে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান বাগদাদ সফরে এসে ১০ বছরের পানি ব্যবস্থাপনা চুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে এখনো ফল দেখতে পায়নি বসরার বাসিন্দারা।