হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীকে নিরস্ত্র করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে লেবানন সরকার

হিজবুল্লাহ
বিদেশে এখন
0

চলতি বছরের মধ্যেই হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীকে নিরস্ত্র করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে লেবানন সরকার। এর জেরে দেশটিতে সামরিক অভিযান বন্ধে ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে হিজবুল্লাহকে নির্মূলের চেষ্টা হলে লেবাননে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন গোষ্ঠীর প্রধান। এদিকে, যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে লেবানন পুনর্গঠনে আর্থিক সহায়তার প্রস্তাবও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

গাজায় যুদ্ধ শুরু হলে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী। এর জেরে গাজা-ইসরাইল যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে লেবাননেও। এতে প্রাণ হারান গোষ্ঠীটির শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ ৫ হাজার যোদ্ধা। ইসরাইলি হামলায় লেবাননের একটি অংশ পরিণত হয় ধ্বংসস্তূপে।

এমন অবস্থায় হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করতে লেবানন সরকারের কাছে প্রস্তাব পেশ করে যুক্তরাষ্ট্র। প্রস্তাবে রয়েছে হিজবুল্লাহসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীকে নিরস্ত্র করা, গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তে লেবাননের বাহিনী মোতায়েন, পাঁচটি অবস্থান থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারসহ বন্দী বিনিময় নিশ্চিত করা। তবে এসব প্রক্রিয়া শেষ করা হবে কয়েকটি ধাপে।

গেল ৭ আগস্ট মার্কিন প্রস্তাব অনুমোদন করে লেবানন সরকার। চলতি বছরের শেষ নাগাদ ধাপে ধাপে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করা হবে। বিনিময়ে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী লেবাননে স্থল, আকাশ ও সমুদ্র অভিযান বন্ধসহ সেনা প্রত্যাহার করবে। তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। লেবাননে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল।

আরও পড়ুন:

এবার ইসরাইলকে হামলা বন্ধ করে এ বিষয়ে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। লেবানন সফরে গিয়ে সিরিয়ার মার্কিন বিশেষ দূত থমাস ব্যারাক জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে হিজবুল্লাহ, লেবানন সরকার ও ইসরাইল সব পক্ষই লাভবান হবে।

সিরিয়ার মার্কিন বিশেষ দূত থামাস ব্যারাক বলেন, ‘ইসরাইলকে কোনো প্রস্তাব দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। প্রথমত, লেবানন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এরপর ইসরাইলকে তাদের অবস্থান নিয়ে আলোচনা হবে। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে। সব পক্ষের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য।’

এছাড়া, যুদ্ধবিধ্বস্ত লেবাননের পুনর্গঠনে একটি অর্থনৈতিক প্রস্তাবও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এরইমধ্যে দেশটির প্রধানমন্ত্রী সামরিক বাহিনী ও যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক দাতাদের কাছে অর্থ সহায়তা চেয়েছেন। বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, যুদ্ধের লেবাননের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১১০০ ডলার। এছাড়া, ২০১৯ সাল থেকে দেশটি ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আছে।

তবে নিরস্ত্রীকরণে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী। তারা কোনো ধরনের চাপের কাছে মাথা নত করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। গোষ্ঠীর প্রধান নাইম কাসেম সতর্ক করেছেন, তাদের নিরস্ত্র করার চেষ্টা করলে গৃহযুদ্ধের মুখে পড়বে লেবানন।

হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীর প্রধান নাইম কাশেম বলেন, ‘যেকোনো সংঘাতের জন্য লেবানন সরকারকে এর দায় নিতে হবে। হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার প্রস্তাব মেনে নেয়া হবে না । লেবাননের যেকোনো ধরনের সংঘাত ও প্রাণহানির জন্য দায়ী থাকবে সরকার।’

এদিকে ইরান বলছে, লেবাননের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ করা উচিত হবে না। তেহরানের নিরাপত্তা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, লেবাননের জন্য সহযোগিতার দুয়ার খোলা রেখেছে ইরান।

ইরানের নিরাপত্তা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা আলি লারিজানি বলেন, ‘লেবাননের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি দেশগুলোর নির্দেশ দেয়া উচিত নয়। লেবাননের জনগণ সাহসী এবং তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। লেবাননের সরকার কর্তৃক গৃহীত যেকোনো সিদ্ধান্ত যা প্রতিরোধের সাথে সংগতিপূর্ণ, ইরান সেসব সিদ্ধান্তকে সম্মান করে।’

হিজবুল্লাহ বিরোধীতার মুখে লেবানন সরকার পরিকল্পনা অনুমোদন নতুন আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এতে লেবাননে আক্রমণ আরও তীব্র করতে পারে ইসরাইল। সংঘাত বাড়তে পারে হিজবুল্লাহর সঙ্গেও।

সেজু