ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আপাতত কোনো আগ্রহ নেই মস্কোর

ভলোদিমির জেলেনস্কি ও  ভ্লাদিমির পুতিন
বিদেশে এখন
0

রুশ প্রেসিডেন্টের গতিবিধি ইঙ্গিত করে, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আপাতত কোনো আগ্রহ নেই মস্কোর। তারা মনে করেন, ইউক্রেন দখলের সঙ্গে রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবের নিবিড় যোগাযোগ আছে। কাজেই এই যুদ্ধের অবসান মস্কোর কাছে পরাজয় হিসেবে গণ্য হবে। তবে, দনবাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার শর্তের সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদ দখলের সম্পর্ক নেই বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের দাবি, ইউক্রনের দুর্গ হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চলটি দখল করতে পারলে একবারে কোণঠাসা হয়ে পড়বে কিয়েভ।

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ৩ শর্ত দিয়েছেন পুতিন। স্পষ্ট বলছেন, ন্যাটোতে যোগদান না করা, আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রশ্নে ইউরোপ থেকে সেনা সহায়তা নেয়ার পরিকল্পনা বাতিল করা ছাড়াও দনবাসের নিয়ন্ত্রণ রাশিয়াকে না দিলে সংঘাত থামাবে না মস্কো।

রয়টার্স বলছে, পুতিনের তিন শর্তের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়লা ও ইস্পাত শিল্পে সমৃদ্ধ এই দনবাস দখল নেয়া। ক্রেমলিন সূত্র বলছে, দনবাসের যেকটি শহর এখনও ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে কিয়েভকে। বিপরীতে ঝাপোরিঝিয়া ও খেরসনের দিকে অগ্রসর হতে থাকা রুশ সেনাদের আপাতত থামার নির্দেশ দেবে মস্কো।

মার্কিন পর্যবেক্ষক দল ও ওপেন সোর্সের তথ্য বলছে, এই মুহূর্তে দনবাসের ৮৮ শতাংশ এবং জাপোরিঝিয়া ও খেরসনের ৭৩ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ আছে রুশ সেনাদের দখলে। বিশ্লেষকরা বলছেন, একবার দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের নিয়ন্ত্রণ পেলে কোনোভাবেই ইউক্রেন থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে না রাশিয়া। বরং ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে অভিযানের তীব্রতা বাড়তে পারে মস্কো।

আরও পড়ুন:

শিল্পপ্রধান এই অঞ্চলটি আসলে ইউক্রেনের দুর্গ হিসেবে কাজ করছে, এ কারণেই দনবাস দখলে মরিয়া পুতিন। বিশ্লেষকদের দাবি, দনবাস হাতে এলে পশ্চিম দিকে ভূখণ্ড সম্প্রসারণের সুবিধা পাবে মস্কো। দনবাস ছাড়াও খেরসন, মাইকোলাইভ এবং জাপোরিঝিয়া কৌশলগতভাবে রাশিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ. কারণ এগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকলে কৃষ্ণসাগরে সহজে প্রবেশের সুযোগ তৈরি হবে। বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, ক্রিমিয়ার পর লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝিয়া এবং খেরসন যদি রাশিয়ার দখলে চলে যায়, আরও বেশি কোণঠাসা হয়ে পড়বে ইউক্রেন।

ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের প্রভাষক ড. মার্নি হাওলেট বলেন, ‘কৌশলগতভাবে এটি রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর মাধ্যমে মস্কো পশ্চিম দিকে সীমানা বাড়াতে পারে এবং দনবাস দখল করে ইউক্রেনের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। দনবাস ছাড়াও, খেরসন, মাইকোলাইভ এবং জাপোরিঝিয়া রাশিয়ার জন্য কৌশলগতভাবে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই অঞ্চলগুলো দখল করলে তারা কৃষ্ণ সাগরে সহজে প্রবেশ করতে পারবে।’

যদিও দনবাস দখলের সঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদের মালিকানা পাওয়ার কোনো সূত্র দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এই অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা মাইনের কারণে আগামী এক দশক বা তারও বেশি সময় এই সম্পদ ব্যবহার করা যাবে না। আর যুদ্ধের কারণে এ অঞ্চলের বেশিরভাগ শহর পুরোপুরি মাটির সাথে মিশে গেছে যা পুনর্গঠন ছাড়া এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করা বাস্তবসম্মত সমাধান নয়।

সেজু