গাজায় চলমান ইসরাইলি আগ্রাসন ও মানবিক সংকটের মধ্যেই যুদ্ধ এবং যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার হোয়াইট হাউজে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের ওই বৈঠকে বসেন ট্রাম্প। এতে, অংশ নেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এবং ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সাবেক বিশেষ দূত জ্যারেড কুশনার। এছাড়াও, এতে অংশ নেন হোয়াইট হাউজের শীর্ষ কর্মকর্তারা। হোয়াইট হাউজ সূত্রের বরাতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানায়, বৈঠকে গাজায় খাদ্য সহায়তা বাড়ানোর পরিকল্পনা, জিম্মি সংকট এবং যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
ট্রাম্পের বৈঠকের আগে ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডেন সার-এর সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আলাদা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের কোন পরিকল্পনা নেই ইসরাইলি সরকারের।
এদিকে, ইসরাইলি বাহিনীর নিরবচ্ছিন্ন হামলায় আগেই পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা। সঙ্গে যোগ হয়েছে তীব্র অনাহার ও অপুষ্টি। নেতানিয়াহু বাহিনীর হামলার পাশাপাশি অনাহারেও প্রতিদিন মৃত্যুবরণ করছেন বহু ফিলিস্তিনি। এবার সেই পরিস্থিতিই আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে সর্তক করে দিয়েছে জাতিসংঘ।
সংস্থাটির মানবিক সহায়তা বিষয়ক উপপ্রধান জানান, উত্তর-মধ্য গাজায়, বিশেষ করে গাজা সিটি এরইমধ্যে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত এটি দক্ষিণের দেইর আল-বালাহ ও খান ইউনিসে ছড়িয়ে পড়বে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক উপপ্রধান জয়েস মসুয়া বলেন, ‘পাঁচ বছরের কম বয়সী অন্তত ১ লাখ ৩২ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ৪৩ হাজারেরও বেশি শিশু আগামী মাসগুলোতে জীবন-সংকটের মুখোমুখি হবে। এটি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা খরার কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ নয়। এটি সম্পূর্ণ মানবসৃষ্ট— একটি সংঘাতের পরিণতি, যা বিপুল প্রাণহানি, আহত, ধ্বংসযজ্ঞ ও বাস্তুচ্যুতি ডেকে এনেছে।’
এদিকে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের আরেক বৈঠকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছেন আলেজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত অমর বেনজামা। বৈঠকে গাজায় অনাহারে ভুগতে থাকা শিশু ও নিহত সাংবাদিকের ছবি তুলে ধরেন বেনজামা। গাজার নাসের হাসপাতালে ইসরাইলি হামলায় সাংবাদিকসহ নিহত ২০ জনের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত।
জাতিসংঘে নিযুক্ত আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত অমর বেনজামা বলেন, ‘আল নাসের হাসপাতালের হামলায় পাঁচ সাংবাদিকসহ নিহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। অথচ তাদের জন্য একটি শব্দও উচ্চারিত হয়নি। জাতিসংঘে নিরাপত্তা পালনে ব্যর্থতা সবাইকে মর্মাহত করেছে।’
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত ড্যানি ডেনন বলেন, ‘গাজায় অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের ছবিগুলোর সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। এসব তথ্য সবই ভিত্তিহীন। তথ্যগুলো যাচাই করে দেখা প্রয়োজন। এসব নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। সত্য উদঘাটনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
গাজায় হামলা শুরুর পর থেকেই ইসরাইলি আগ্রাসনে প্রাণ হারিয়েছেন বহু সাংবাদিক। নিহত এসব সাংবাদিকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে লন্ডনের ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে জড়ো হন ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনকর্মী ও সমর্থকরা। ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টস এনইউজে-এর লন্ডন ফ্রিল্যান্স শাখার উদ্যোগে এ প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে, চলমান যুদ্ধে নিহত ১৯৭ জন নিহত সাংবাদিকের নাম পড়ে শোনানো হয় এবং তাদের নাম লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়।