যানবাহন চলাচলের রাস্তায় হাঁটু থেকে বুক সমান পানি। ৪০ বছরের মধ্যে রেকর্ড বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় এমন বিপর্যয়ের কবলে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ। বন্যার হানায় প্রতিদিনই প্রাণ ঝরছে মানুষের।
চলতি সপ্তাহের শেষে আরও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসও দেয়া হয়েছে। এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই হাজার ৩০০ বেশি গ্রামের ১৫ লাখের বেশি বাসিন্দা।
বন্যার পানিতে লাহোরের বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকার অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। ঘরে বন্যার পানি পৌঁছানোর আগে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘দুঃখজনক বিষয় হলো কর্তৃপক্ষ রাত ১টা ৩০ মিনিটে জানিয়েছে সবকিছু ডুবে গেলে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে হবে। এছাড়া বাড়ির দরজায় পানি পৌঁছানোর পর আমাদের উদ্ধার করছে।’
বাড়িতে ফিরে যাওয়ার আগে আমরা আমাদের ক্ষতি সম্পর্কে জানতে পারব না। কর্তৃপক্ষ কি আমাদের ক্ষতিপূরণ দেবে? আসবাবপত্র, ফ্রিজ এবং ওভেন সবকিছু নষ্ট হয়ে যাবে। বন্যার পানি ডুবে যাওয়ার মাত্র ১০ মিনিট আগে পুলিশ আমাদের জোর করে উদ্ধার করেছে।
ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি ডুবে যাওয়ায় মাথায় হাত ক্ষতিগ্রস্তদের। গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে পড়েছেন অনেকে। খাদ্য, সুপেয় পানি ও নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। তবুও সরকারের কাছ থেকে কোনো সাহায্য পাচ্ছেন না বলে আক্ষেপের কথা তুলে ধরেছেন অনেকে।
আরও পড়ুন:
বাসিন্দাদের আরেকজন বলেন, ‘বন্যার পানি আমাদের প্রায় অর্ধেক জিনিসপত্র ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আমরা বাকি জিনিসপত্র রাস্তায় এনে রেখেছি। তিন দিন হয়ে গেছে, কিন্তু আমরা সরকারের কাছ থেকে কোনও সাহায্য পাইনি। কোনও সরকারি কর্মকর্তা আমাদের দেখতেও আসেনি।’
যদিও পাঞ্জাবের প্রাদেশিক সরকারের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত দেশটির পূর্বাঞ্চলের ১০ লাখেরও বেশি মানুষকে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে তারা। আর নজিরবিহীন বন্যা পরিস্থিতির জন্য ভারি বর্ষণের মধ্যে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢল এবং বাঁধের পানি ছেড়ে দেয়াকে দুষছে পাকিস্তান।
রাভি, শতদ্রু এবং চেনাব নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে সতর্ক করেছে প্রদেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ- পিডিএমএ।
পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, চলতি বর্ষা মৌসুমে এখন পর্যন্ত পুরো পাকিস্তানে ৮২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিক বন্যার হানায় শুধু পাঞ্জাবে প্রাণ গেছে ৩০ জনের।
এদিকে মুষলধারে বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যা-ভূমিধসে নাজেহাল অবস্থা ভারতের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার। শনিবার জম্মু ও কাশ্মীরের রেয়াসি এবং রামবান জেলায় ভারী বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট ভূমিধসে একই পরিবারের ৭ সদস্যসহ কমপক্ষে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।