চীনের সামরিক কুচকাওয়াজ: নতুন নেতৃত্বের বার্তা নাকি ষড়যন্ত্র!

চীনে বিশেষ সামরিক কুচকাওয়াজ
বিদেশে এখন
0

পশ্চিমা আধিপত্যবিরোধী নেতাদের একত্রিত করে বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থায় নতুন নেতৃত্বের বার্তা দিলো চীন। অভূতপূর্ব সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করে জানান দিয়েছে অজেয় অস্ত্র সক্ষমতার। পুরো বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে দাবি মার্কিন প্রেসিডেন্টের।

একদিকে বিপুল অস্ত্র সক্ষমতার প্রদর্শনী অন্যদিকে অস্ত্রের ব্যবহার। গতকাল (বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর) প্রথম প্রহরে যখন একযোগে পাঁচশ’র বেশি ড্রোন আর ক্রুজ মিসাইল উড়ে যাচ্ছিল ইউক্রেনের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে, চীনা ভূখণ্ডে তখন প্রস্তুতি চলছে জমকালো আয়োজনে রুশ প্রেসিডেন্টসহ এমন সব নেতাদের এক করার, যারা জোট বাঁধলে হয়তো অসম্ভব নয় বিশ্ব রাজনীতির নেতৃত্ব পাল্টে যাওয়া।

দিনের সবচেয়ে চমকপ্রদ দৃশ্য ছিল, চীনের ঐতিহাসিক তিয়ানমেন স্কয়ারে চীনের চোখধাঁধাঁনো সামরিক কুচকাওয়াজে স্বৈরশাসক খ্যাত তিন নেতা চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনের একসাথে হেঁটে যাওয়া। পেছনে ছিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধানসহ পশ্চিমা আধিপত্যবিরোধী বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আরও অনেক নেতা। বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্রদের বিরুদ্ধে বিকল্প বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থার বার্তা অভূতপূর্ব এ মিলনমেলা। সতর্কবার্তা, নাগালের বাইরে চলে গেছে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ।

সিঙ্গাপুর নানইয়াং ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. জেমস চার বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে যা ঘটেছে, বিশ্বের প্রতিটি দেশ এ বিষয়ে অবগত। পারমাণবিক অস্ত্র থাকা আকস্মিক জরুরি পরিস্থিতির বিরুদ্ধে এক ধরনের সুরক্ষা। গেলো ক'বছরে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব নেতৃত্বের জায়গা হারানোর সুযোগে চীন শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা করছে। ফলে চীনের প্রতিবেশী দেশগুলোও নিজেদের রক্ষায় সচেষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের মতো দেশগুলোও নিজেদের পারমাণবিক সক্ষমতা চাইবে। সবমিলিয়ে সম্ভাবনা হারিয়ে ফেলেছে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টি।’

কুচকাওয়াজ শেষে দুই ঘণ্টার বেশি সময় রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট। এসময়, রাশিয়ায় কিমকে আমন্ত্রণ জানান পুতিন। এর আগে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সেনা পাঠিয়ে মস্কোকে সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতাও জানান রুশ নেতা। পুরো ঘটনাপ্রবাহে বিস্মিত বিশ্ব রাজনীতিতে ছড়ি ঘোরানো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকটা ঠেস দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জন্য অভিবাদন জানান তিন নেতাকে। প্রতিক্রিয়ায় রুশ প্রেসিডেন্টের সহযোগী জানান, কেউ কোনো ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে নেই।

আরও পড়ুন:

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধ উসকে দেয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর তালিকা ঢেলে সাজাতে ব্যস্ত, তখনই চীনের বিশ্বের সবচেয়ে প্রতাপশালী স্বৈরশাসকদের একত্রিত করলেন শি জিনপিং। একইসঙ্গে প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্র আর এয়ার-ডিফেন্স লেজার, স্টেলথ ফাইটার জেট, জাহাজ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, সবচেয়ে নতুন আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল, সমুদ্রের নিচেও সচল ড্রোন আর রোবট কুকুরসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রদর্শনীর আয়োজন হয়; যেখানে দৃশ্যমান ছিল আধুনিক যুদ্ধ সক্ষমতা ও প্রতিরক্ষায় চীনের বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ।

জেইন্স প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক জন গ্রেভাট বলেন, ‘উচ্চ সক্ষমতার নতুন ব্যালিস্টিক মিসাইল সামনে এনেছে চীন, যেটি আগেরগুলোর চেয়েও আরও দূরের লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম, সম্ভবত ১৫ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত যেতে পারবে। আরও বেশি শক্তিশালী এবং আরও সহজে পরিচালনাযোগ্য, কারণ বেশ কিছু মিসাইল একসাথে কয়েকটি বোমা বহনে সক্ষম।’

বলা হচ্ছে, শুধু বিশ্ব রাজনীতির হর্তাকর্তাদেরই নয়, অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র রপ্তানির বাজার ধরতে নিজেদের প্রস্তুতিও জানান দিয়েছে চীন। বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ অর্থনীতি হলেও অস্ত্র রপ্তানিতে শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ধারেকাছেও নেই চীনা অস্ত্র নির্মাতারা।

ইএ