২০২৩ সালে গাজা-ইসরাইল যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে বেড়েছে সহিংসতার হার। জাতিসংঘের তথ্য মতে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ৯ শতাধিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ফিলিস্তিনিদের অভিযোগ, এ অঞ্চল থেকে তাদের বিতাড়িত করার মিশনে নেমেছে অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা।
পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিরা দীর্ঘদিন ধরেই পানির জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। এবার ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা তাদের বেশ কয়েকটি পানির উৎস বন্ধ করে দিয়ে পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। জাতিসংঘ বলছে, গেল ছয় মাসে অধিকৃত পশ্চিম তীরের পানির কূপ, পাইপলাইন, সেচ নেটওয়ার্ক এবং পানির অবকাঠামোতে ভাঙচুরের ৬২টি ঘটনা ঘটেছে।
পানির সংকটে পর্যাপ্ত খাবার পানি পাচ্ছে না বাসিন্দারা। শুকিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। তীব্র পানির সংকটে ভুগছে গবাদি পশু। পশ্চিম তীরের প্রশাসনিক রাজধানী রামাল্লায় পানির সংকটে বাসিন্দারা হাহাকার করছে।
পশ্চিম তীরের বাসিন্দারা বলেন, ‘ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা পানি সরবরাহের পাইপগুলো ভেঙে ফেলেছে। বেশ কয়েকবার সেগুলো মেরামত করেও লাভ হয়নি। পশ্চিম তীরের প্রধান পানি সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ করে রেখেছে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা। তাই আমরা এ জায়গা থেকে পানি সংগ্রহে বাধ্য হচ্ছি। এখন পানি নিয়ে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের সঙ্গে আমাদের সংঘাত চলছে। এটিই এখন সংঘাতের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
রামাল্লাহ থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে আইন সামিয়ায় একটি মিঠা পানির ঝর্ণা ও পানি বিতরণ কেন্দ্র দখল করে রেখেছে ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা। অথচ এই উৎসগুলোর ওপর প্রায় ২০টি ফিলিস্তিনি গ্রাম নির্ভর করে আছে। পানির উৎস ধ্বংস বা নষ্ট করার বিষয়টি ইসরাইলি সেনাবাহিনী স্বীকার করলেও, কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
আরও পড়ুন:
কারদালা অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান মিথকাল ফুকাহ বলেন, ‘আক্ষরিক অর্থে এটি একটি বড় বিপর্যয়। ইসরাইলিরা পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলোও বন্ধ করে দিয়েছে। তারা উল্টো খরা ও কম বৃষ্টিপাতকে পানি সংকটের জন্য দায়ী করছে। এটি এখন নিরাপত্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখান থেকে ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করার একটি পদ্ধতিগত পদক্ষেপ।’
সম্প্রতি ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা পশ্চিম তীরের বেশিরভাগ প্রাকৃতিক ঝর্ণার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেখানে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। জীবন বাজি রেখে পানি সংগ্রহ দূর দূরান্তে যেতে হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের। বর্তমানে এই অঞ্চলের পানির উৎস মূলত ইসরাইলিদের হাতে।
বাটসেলেমের মাঠ গবেষণা পরিচালক কারিম জাবরান বলেন, ‘এটি খুবই স্পষ্ট ইহুদি বসতিগুলোতে কৃষিজমি ও বাসিন্দাদের জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনি সম্প্রদায় পানি তীব্র সংকটে ভুগছে। তাদের কৃষিজমি শুকিয়ে গেছে। যার মধ্য দিয়ে ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে প্রকৃত দুর্ভোগের চিত্র ফুটে ওঠেছে।’
তবে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রতি বছর ৯০ মিলিয়ন ঘনমিটার পানি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে তারা বুঝিয়ে দেয়। ফিলিস্তিনিদের পানির সংকট তেমন নেই।
তারা বলেন, ‘এটি ইসরাইলের ভূখণ্ড। ফিলিস্তিনিরা এখানে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করতে চাইলে কোনো সমস্যা নেই। তবে আমাদের ওপর আক্রমণ করলেও তারা ছাড়া পাবে না।’
অধিকৃত পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং গাজা উপত্যকা নিয়ে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি দেশ পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী বলেও মত দেয়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে পশ্চিম তীরের বসতি স্থাপনকারীরা।