রাশিয়ার ড্রোন পোল্যান্ডে প্রবেশে উত্তেজনা, ন্যাটোর হুঁশিয়ারি

আকাশসীমা থেকে রাশিয়ার ড্রোন নামালো পোল্যান্ড
বিদেশে এখন
0

ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র পোল্যান্ডের আকাশসীমায় রাশিয়ার ড্রোন ঢুকে পড়ায় উত্তেজনা তুঙ্গে। যুদ্ধ বন্ধে পশ্চিমাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় নিজেদেরকে শক্ত অবস্থানে রাখতে রাশিয়া এ উস্কানিমূলক পথ বেছে নিয়েছে বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা। এতে করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ন্যাটো-রাশিয়া যুদ্ধে মোড় নেয় কি-না তা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। উস্কানি ও বেপরোয়া আচরণের বিষয়ে রাশিয়াকে হুঁশিয়ার করেছেন ন্যাটো প্রধান মার্ক রুট।

ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে সম্প্রতি রাশিয়াকে চাপ দিয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলো। এসবের তোয়াক্কা না করে উল্টো ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে মস্কো। এবার ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র পোল্যান্ডের আকাশসীমায় রুশ বাহিনীর ছোড়া ড্রোন ঢুকে পড়ায় উত্তেজনা তুঙ্গে। বিপুলসংখ্যক ড্রোন ভূপাতিতও করেছে পোল্যান্ড ও ন্যাটো সেনারা। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম জড়িয়ে পড়লো পোল্যান্ড ও ন্যাটো বাহিনী।

বুধবারের এ ঘটনায় পোল্যান্ডের অনেক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার কারণে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন দেশটির সাধারণ মানুষ।

শান্তি বিশ্লেষক ড. সাশা হাচ বলেন, আমি এখন নিরাপদ বোধ করছি না। রাশিয়া আমাদের দেশে অনুপ্রবেশ করতে চাইছে বলে মনে হচ্ছে। হয়তো আমাদের আকাশসীমায় তাদের ড্রোন আসা তারই ইঙ্গিত।

গুরুত্ব দিয়ে আমাদের নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবা উচিত। ড্রোনগুলো আমাদের হুমকি দেয়ার জন্য ছোড়া হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে।

এ অবস্থায় ইউক্রেন যুদ্ধ ন্যাটো-রাশিয়া যুদ্ধে মোড় নেয় কি-না তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যুদ্ধের খুব দ্বারপ্রান্তে না হলেও; এ ঘটনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক।

পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, ‘আমি খুব জোর দিয়ে বলতে চাই যে আমরা যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে আছি বলে দাবি করার কোনও কারণ নেই। তবে এতে কোনও সন্দেহ নেই রাশিয়ার এ উস্কানি সীমা অতিক্রম করেছে। এ পরিস্থিতি আমাদের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সংঘাত শুরুর সবচেয়ে কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে।'

আরও পড়ুন:

জোটের সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়া আরও বেপরোয়া আচরণ এবং আকাশসীমা লঙ্ঘন করতে চাইলে উচিত জবাব দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন ন্যাটো প্রধান মার্ক রুট। ন্যাটো অঞ্চলের আকাশসীমাসহ প্রতিটি ইঞ্চি রক্ষায় প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক রুট বলেন, ‘রাশিয়ার অসংখ্য ড্রোন পোলিশ আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। আমাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে। পাশাপাশি পুরো ন্যাটো অঞ্চলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হয়েছে। মিত্ররা মিত্র অঞ্চলের প্রতিটি ইঞ্চি রক্ষার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা আমাদের পূর্ব সীমান্ত পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।'

যুদ্ধ বন্ধে চলমান কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় আলোচনার টেবিলে নিজেদের শক্ত অবস্থান নিশ্চিতে রাশিয়া এই উস্কানিমূলক পথ বেছে নিয়েছে বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা। তবে ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আপাতত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বন্ধের শঙ্কা করা হচ্ছে না।

শান্তি বিশ্লেষক ড. সাশা হাচ বলেন, ‘সম্প্রতি ইউক্রেনে ব্যাপক ড্রোন হামলা এবং পোলিশ আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনা স্পষ্টতই একটি উস্কানি। এখন দেখার বিষয় ন্যাটো, পশ্চিমা মিত্র এবং বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এই পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করে। কারণ শান্তি আলোচনায় নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী রাখতেই এই পথে এগুচ্ছে রাশিয়া। আমার মনে হচ্ছে ইউরোপীয় এবং আমেরিকানদের ভয় দেখাতে চাইছে রাশিয়া। যদি এমনটা হয় তাহলে ফলাফল ভয়াবহ হবে।'

যদিও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করছে, ড্রোন দিয়ে পোল্যান্ডের কোনও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার পরিকল্পনা ছিল না তাদের। ড্রোন হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিলো পশ্চিম ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি সামরিক স্থাপনা।

ইএ