রুশ সীমান্ত থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে বাঙ্কার তৈরি করছেন ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র পোল্যান্ডের সেনা ও স্বেচ্ছাসেবকরা। চলছে সামরিক প্রশিক্ষণ। যেখানে সেনাদের পাশাপাশি স্বেচ্ছায় যোগ দিয়েছে অনেক সাধারণ মানুষও। তাদের মধ্যে ১৩ বছর বয়সী এক সন্তানের জননী অ্যাগনিয়েস্কা জেদ্রুসজাক অন্যতম।
পোল্যান্ডে সম্প্রতি রাশিয়ার বেশ কয়েকটি ড্রোনের অনুপ্রবেশের ঘটনার পর; যুদ্ধের শঙ্কা থেকে এভাবেই নিজেদের প্রস্তুত করছেন অনেকে। যুদ্ধ বেধে গেলে যাতে নিজ সন্তান, পরিবার ও দেশকে রক্ষা করা যায়, সেই চিন্তা থেকেই রণক্ষেত্রের লড়াই কৌশল শিখতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মা-বাবা ও সন্তানরাও।
বাসিন্দারা বলেন, ‘সেনাবাহিনীতে যোগদানের স্বপ্ন ছোটবেলা থেকেই ছিলো। কিন্তু সম্ভব হয়নি। এ মুহূর্তে শুধু বেঁচে থাকার জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। আমার সন্তান ও পরিবারকে নিরাপদ রাখার জন্য আমি যেকোনো কিছু করতে পারি।’
অপর একজন বাসিন্দা বলেন,‘আমি তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। বর্তমান পরিস্থিতি পরিবার ছাড়াও দেশকে রক্ষার প্রয়োজন অনুভব করছি। ঠিক যেমন আমাদের পূর্বপুরুষরা জন্মভূমি রক্ষায় নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন।’
মূলত পোল্যান্ডে ড্রোন আক্রমণের পর ১০ সেপ্টেম্বর ন্যাটো সীমান্তে রাশিয়া-বেলারুশের জাপাড মহড়া উত্তেজনার পারদ বাড়িয়েছে। পোল্যান্ডসহ পুরো ন্যাটো জোট মনে করছে, এসবের মধ্য দিয়ে অভিযান শুরুর জন্য উস্কানি দিচ্ছে মস্কো। যার কারণে বেলারুশের সঙ্গে সীমান্তও বন্ধ করে দিয়েছে পোল্যান্ড। এমনকি পোল্যান্ড এবং ন্যাটোর পূর্ব সীমান্ত রক্ষায় তিনটি রাফায়েল যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে ফ্রান্স। এছাড়া ইউরোপের পূর্বাঞ্চলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও জোরদারের ঘোষণা দিয়েছে ন্যাটো।
ন্যাটো প্রধান কমান্ডার জেনারেল অ্যালেক্সাস গ্রিন কিউইচ বলেন, ‘আমি পূর্ব সেন্ট্রি শুরু করার জন্য আদেশ জারি করেছি।’
আরও পড়ুন:
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক পর্যন্ত গড়িয়েছে এ রাশিয়া-ন্যাটো উত্তেজনা প্রসঙ্গ। যেখানে রুশ ড্রোন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির ছবি উঁচিয়ে ধরে ক্ষোভ ঝেড়েছেন পোল্যান্ডের প্রতিনিধি মার্সিন বোসাকি। আর এর জন্য রাশিয়াকে দায়ী করে ন্যাটো মিত্র দেশ পোল্যান্ডের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি।
জাতিসংঘের ভারপ্রাপ্ত মার্কিন প্রতিনিধি ডরোথি শি বলেন, ‘উদ্বেগজনক আকাশসীমা লঙ্ঘনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো মিত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছে। উত্তর আটলান্টিক চুক্তির ৪ নম্বর ধারার অধীনে যুক্তরাষ্ট্র পোল্যান্ড এবং আমাদের অন্যান্য ন্যাটো মিত্রদের সাথে পরামর্শ করছে। নিশ্চিত থাকুন, আমরা ন্যাটো ভূখণ্ডের প্রতিটি ইঞ্চি রক্ষা করব।’
যদিও রাশিয়া দাবি করছে, ইউক্রেনে হামলা চালানোর সময় ভুলবশত পোল্যান্ডের আকাশসীমায় ঢুকে পড়েছে রুশ সেনাদের ড্রোন।
জাতিসংঘের রুশ প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, ‘দূরপাল্লার ড্রোন দিয়ে ওইদিন আমাদের সশস্ত্র বাহিনী কেবল ইউক্রেনের সামরিক শিল্প স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করেছে। আমরা পোলিশ ভূখণ্ড লক্ষ্যবস্তু করিনি। সুতরাং আমাদের বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগ স্পষ্টই ভিত্তিহীন। পোল্যান্ড যদি উত্তেজনা বাড়ানোর পরিবর্তে কমাতে আগ্রহী হয়, তাহলে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংলাপের জন্য প্রস্তুত।’
নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠকের আগে জাতিসংঘের ৪৩টি দেশের একটি যৌথ বিবৃতিতে, দ্রুত ইউক্রেনে রুশ অভিযান বন্ধসহ ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্রকে উস্কানি দেয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।