ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক সম্পদ চুরির অভিযোগ ট্রাম্পের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
বিদেশে এখন
0

এবার ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক সম্পদ চুরির অভিযোগ আনলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুই দেশের চলমান উত্তেজনায় বিশ্ব বাজারের বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। তবে, শত হুমকির মুখেও তেলের সরবরাহ ও বাণিজ্য অব্যাহত রাখার ঘোষণা প্রেসিডেন্ট মাদুরোর। এদিকে, ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ভেনেজুয়েলা। মার্কিন প্রশাসনের পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগে লাতিন অঞ্চলের দেশ ব্রাজিল, মেক্সিকো, কিউবা।

যুক্তরাষ্ট্র-ভেনেজুয়েলার চলমান উত্তেজনায় অস্থিরতা দেখা দিয়েছে জ্বালানি তেলের বাজারে। ট্যাংকার অবরোধে ট্রাম্পের হুমকিতে আরও তীব্র হয়েছে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা। উদ্বেগ দেখা দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও। এরই মধ্যে বিশ্ববাজারে ব্রেন্ট ক্রুড জ্বালানি তেলের দাম ১ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ব্যারেল প্রতি দাঁড়িয়েছে ৫৯ দশমিক ৯১ ডলারে।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞাভুক্ত জ্বালানি তেলের ট্যাংকার ভেনেজুয়েলার জলসীমায় সর্বাত্মক অবরোধের নির্দেশ দেয়ার একদিন পরই ট্রাম্প বললেন, এ জলসীমা দিয়ে কোনো জাহাজকেই পার হতে দেয়া হবে না। অভিযোগ করেন, ভেনেজুয়েলা যুক্তরাষ্ট্রের প্রাকৃতিক সম্পদ চুরি করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জমি, তেলের অধিকার যা কিছু ছিলো তা আবার ফিরিয়ে আনা হবে। ভেনেজুয়েলা এসব সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রের থেকে কেড়ে নিয়েছে। আমাদের এমন একজন প্রেসিডেন্ট ছিলেন যিনি এসব বিষয় খেয়াল করেননি। তবে রিপাবলিকানরা তা করবে না।’

এবার ট্রাম্পের সহযোগী স্টিফেন মিলার দাবি করেছেন, ভেনেজুয়েলার জ্বালানি তেলের ভাণ্ডার মূলত যুক্তরাষ্ট্রের। যা ভেনেজুয়েলা দখল করে বসে আছে। হোয়াইট হাউসের এ ডেপুটি চিফ অব স্টাফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, মার্কিন নাগরিকদের ঘাম, বুদ্ধিমত্তা ও পরিশ্রমে ভেনেজুয়েলার তেলশিল্প গড়ে উঠেছে।

এমন মন্তব্যের মাধ্যমেই ট্রাম্প প্রশাসনের আসল উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছে ভেনেজুয়েলা সরকার। তবে শত হুমকির মুখেও তেল বাণিজ্য অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। তেলসহ সমস্ত পণ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন:

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বলেন, ‘ভেনেজুয়েলা তার সমস্ত পণ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চালিয়ে যাবে। এ অঞ্চলের তেল ও সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদ ভেনেজুয়েলার যা সংবিধান দ্বারা বিধিবদ্ধ। উত্তরাধিকার সূত্রে এসব সম্পদের বৈধ মালিক কেবল ভেনেজুয়েলা। যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সার্বভৌম জনগণ ভেনেজুয়েলার ভূমি, মাটি এবং এর সমস্ত সম্পদের মালিক।’

এদিকে, ক্যারিবিয়ান জলসীমায় ট্রাম্পের নৌ অবরোধ এবং চুরির অপবাদকে ভ্রান্ত ও অসঙ্গত বলে নিন্দা জানিয়েছেন ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদ্রিনো লোপেজ। এসব অভিযোগের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য উদ্দেশ্য কাজ করছে বলেও মন্তব্য তার। এদিকে, ট্যাংকার অবরোধে ট্রাম্পের আদেশ প্রত্যাখ্যান করে একটি প্রস্তাব পাস করেছে দেশটির জাতীয় পরিষদ। পরিষদের প্রেসিডেন্ট বলেন, ট্রাম্পের মূল আগ্রহ ভেনেজুয়েলার প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ নেয়া।

এদিকে, ট্রাম্প বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ভেনেজুয়েলা। রাজধানী কারাকাসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে প্রেসিডেন্ট মাদুরোর শত শত সমর্থক। এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন দেশটির সাধারণ মানুষও। দৈনন্দিন জীবনে অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে চিন্তিত বাসিন্দারা।

বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন জলদস্যু। কেবল ভেনেজুয়েলা নয় তিনি সাগর, মহাসাগরসহ সবকিছুই অবরুদ্ধ করছেন।

অন্য আরেকজন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আসল উদ্দেশ্য ভেনেজুয়েলার সম্পদ কেড়ে নেয়া। যা ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।’

এদিকে, মার্কিন প্রশাসনের তৎপরতায় চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে লাতিন অঞ্চলের বেশকিছু দেশের ওপর। ব্রাজিলে প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা বলেন, ট্রাম্পের উচিত সামরিক শক্তি পরিহার করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথে আসা। ভেনেজুয়েলায় রক্তপাত এড়াতে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট ক্লডিয়া শেইনবাউম। লাতিন আমেরিকার আরেক দেশ কিউবা বলছে, ট্রাম্পের এসব পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি। যা এ অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।

ক্যারিবিয়ান অঞ্চল পুয়ের্তো রিকোর নৌঘাঁটিতে সামরিক অবস্থান ক্রমেই শক্তিশালী করছে যুক্তরাষ্ট্র। নৌবাহিনীর বিমান, যুদ্ধ জাহাজ, অস্ত্র ও সেনা মোতায়েন জোরদার করেছে। যেখানে ইলেকট্রনিক যুদ্ধবিমান ও বিভিন্ন হেলিকপ্টারসহ শত্রুপক্ষের রাডার সনাক্তকরণ যন্ত্র ও হাই-স্পিড অ্যান্টি-রেডিয়েশন মিসাইলও আছে।

এফএস