পাকিস্তানে জুমার নামাজ পড়ায় গণপিটুনিতে আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের সদস্য নিহত

গণপিটুনির প্রতীকী দৃশ্য
এশিয়া
বিদেশে এখন
0

জুমার নামাজ পড়ায় গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হলো এক ব্যক্তিকে। ঘটনাটি ঘটেছে মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তানে। এ হত্যাকাণ্ডের পর কমপক্ষে ৬শ' সংঘবদ্ধ জনতার হাত থেকে সংখ্যালঘু আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের আরও অন্তত ২৫ জনকে বাঁচাতে তাদের নিরাপত্তা হেফাজতে নেয় পুলিশ।

ইট, পাথর আর লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ৪৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে হত্যার পর সংখ্যালঘুদের বসতিকে ঘিরে ফেলে সংঘবদ্ধ জনতা। মুসলিম অধ্যুষিত দেশ পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নিরা সংখ্যালঘু আহমাদিয়াদের মুসলিম হিসেবে গণ্য করে না বলে নামাজ পড়াই কাল হয় ওই ব্যক্তির।

পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় শহর করাচিতে শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর আহমাদিয়াদের নামাজের স্থানে হামলা চালায় সংঘবদ্ধ জনতা। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, আহমাদিয়া হত্যা ও হামলার সাথে জড়িতদের মধ্যে ধর্মীয় অবমাননা বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান- টিএলপির সদস্যরা ছিল।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের ভবনটির বাইরে প্রথমে ১শ' থেকে ২শ'জন জড়ো হয়ে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মারে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের মুখপাত্র আমির মাহমুদ। এ সময় ভেঙে দেয়া হয় আহমাদি মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত ভবনটির গম্বুজ আর মিনার।

তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তানের স্থানীয় নেতা কাদির আশরাফি বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরেই নিয়মিত এখানে আজান দেয়া হচ্ছিল। অথচ জনতা অনেকদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিল যেন আজান না দেয়া হয়। এরপর এই গম্বুজ, মিনারসহ মসজিদের সাথে মিল আছে এমন স্থাপনাগুলো ভেঙে ফেলার জন্য মামলাও দায়ের করি। সে মামলা এখনও চলছে। কিন্তু এখানকার ক্ষুব্ধ মুসলিমরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে গম্বুজ আর মিনারগুলো ভেঙে ফেলে।’

পুলিশ জানায়, হামলার ঘটনায় ভবনের ভেতর আটকা পড়েন প্রায় ৩০ জন মানুষ। কমপক্ষে ৬শ' দুর্বৃত্তের রোষ থেকে প্রাণে বাঁচাতে কমপক্ষে ২৫ জন আহমাদিয়া মুসলিমকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের গাড়িতে যেন হামলা না হয়, তা নিশ্চিতে দীর্ঘ সময় উত্তেজিত জনতার সাথে আলোচনাও করতে হয় পুলিশের।

কট্টর সংগঠনটির বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে জুম্মার নামাজ পড়া আহমাদিয়াদের শনাক্ত করার। পাকিস্তানের বিতর্কিত ব্লাসফেমি বা ধর্মীয় অবমাননা বিরোধী আইনের সমর্থক টিএলপি নিয়মিতই আহমাদিবিরোধী বিক্ষোভ আয়োজন করে থাকে। শুক্রবারের হামলার আগেও ভিড় থেকে উঠেছিল আহমাদিবিরোধী রব।

স্থানীয় নেতা কাদির আশরাফি বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। আদালত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত এই স্থান বন্ধ রাখতে হবে এবং প্রবেশ-চলাচল পুরোপুরি নিষিদ্ধ রাখতে হবে।’

৯০ শতাংশ সুন্নি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যা প্রায় ২৫ কোটি। এদের মধ্যে আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের সদস্য প্রায় পাঁচ লাখ। ১৯৭৪ সালে আহমাদিয়াদের অমুসলিম ঘোষণা করে আইন পাস করে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট। আইন অনুযায়ী নিজেদের মুসলিম বলা বা ইসলাম ধর্মে প্রচলিত ধর্মীয় রীতি অনুসরণ ও যেকোনো অনুষঙ্গ বা প্রতীক ব্যবহার নিষিদ্ধ আহমাদিয়াদের জন্য।

ইসলাম ধর্মে অবিশ্বাসী ধরে নিয়ে আহমাদিয়াদের বাড়িঘর ও নামাজের স্থানে কট্টর সুন্নিদের হামলা পাকিস্তানে প্রায় নিয়মিত ঘটনা। ২০২৪ সালে দেশটিতে কমপক্ষে ছয়জন এবং ১৯৮৪ সাল থেকে ৪০ বছরে ২৮০ জনের বেশি আহমাদিয়াকে হত্যা করা হয়েছে ধর্মবিশ্বাসে ভিন্নতার কারণে।

সারা বিশ্বের প্রায় এক কোটি আহমাদিয়া জনগোষ্ঠী নিজেদের মুসলিম গণ্য করে। ইসলাম ধর্মের মূলধারা বা সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি সম্প্রদায়ের ধর্মবিশ্বাসের সাথে প্রায় সব দিক থেকে হুবহু মিলে যায় আহমাদিয়াদের ধর্মবিশ্বাস।

পার্থক্য শুধু শেষ নবীতে। সুন্নি মুসলিমদের বিশ্বাস, মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শেষ নবী এবং কথিত আছে তার অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে কেয়ামতের আগে পৃথিবীতে ফিরবেন হজরত ঈসা আল্লাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইমাম মাহদি। এখানেই সুন্নিদের সাথে সংঘর্ষ আহমাদিয়াদের। আহমাদিয়া বিশ্বাসে সম্প্রদায়টির প্রতিষ্ঠাতা মির্জা গুলাম আহমেদ তাদের প্রতিশ্রুত নবী ও মসিহা।

সেজু