তিন বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো, ভয়াবহ মৌসুমি বন্যার কবলে পাকিস্তানের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে। ৪০ বছরের মধ্যে রেকর্ড বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় নেমে এসেছে দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশে।
চেনাব, রাভি এবং শতদ্রু নদীর অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতি সবচেয়ে নাজুক। এতে করে ইতোমধ্যেই পাঞ্জাবের প্রায় ৪ হাজার গ্রামের ১৮ লাখের বেশি মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ৬-৯ সেপ্টেম্বর পাঞ্জাবে বজ্রপাতসহ বৃষ্টির সতর্কতায় বন্যার্তদের আরও দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। বন্যা সংকটের কারণে পাঞ্জাবের উপনির্বাচন স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।
পাঞ্জাব প্রদেশের প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাপরিচালক ইরফান আলী কাঠিয়া বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত পাঞ্জাব প্রদেশের ৩,৯৫১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমরা ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার ৬১৭ জনকে বন্যা কবলিত এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়েছি।’
সিন্ধু নদী তীরের দক্ষিণ দিকেও বন্যার পানি ঢুকতে থাকায় নিম্নাঞ্চল থেকে ৯৪,০০০ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন হওয়ার শঙ্কা করছে পাকিস্তান বিজনেস ফোরাম-পিবিএফ। যার কারণে অবিলম্বে দেশটির কৃষি খাতে জরুরি অবস্থা ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। এমনকি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আভাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফকে চিঠিও পাঠিয়েছে পিবিএফ।
পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, জুনের শেষের দিক থেকে শুরু বর্ষা মৌসুমে সৃষ্ট বন্যায় দেশজুড়ে ৮৮০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছে। যার মধ্যে শুধু পাঞ্জাবেই ২২০ জনের বেশি। এরমধ্যে সাম্প্রতিক বন্যায় পাঞ্জাবের মৃতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানের এই বন্যা পরিস্থিতিতে গভীর দুঃখপ্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস। মানবিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
এদিকে পাকিস্তানের প্রতিবেশি ভারতও ভয়াবহ বন্যায় বিপদের মুখোমুখি। হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এবং ভারতশাসিত পাঞ্জাবসহ উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে ভারী মৌসুমি বৃষ্টিতে সীমান্তের দু'পাশের নদীগুলোর পানি বাড়ায় বন্যা দেখা দিয়েছে। ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা। কাজ না থাকায় জীবন-জীবিকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয়দের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমাদের কাছে খুব বেশি খাবার নেই। আমাদের কোনও কাজ নেই। আমরা যা চাই তা পেতে এবং প্রস্তুত করতে পারছি না। আমাদের খাবারের অভাব রয়েছে।’
অন্য একজন বলেন, ‘গতকাল দিন-রাত বৃষ্টি হওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এ বছর বন্যা পরিস্থিতি আগের বছরের তুলনায় অনেক খারাপ।’
বন্যার হানায় এরইমধ্যে ভারতে দেড় শতাধিক মানুষ মারা গেছে। যার মধ্যে ভারতশাসিত পাঞ্জাবেই মারা গেছে ৩০ জনের বেশি। এছাড়া বন্যার কারণে ভারতের পাঞ্জাব সরকার স্কুল, কলেজ বন্ধের সময় ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এছাড়া টানা ১০ দিনের জন্য বৈষ্ণো দেবী মন্দিরে তীর্থযাত্রাও স্থগিত করা হয়েছে।