নিজেদের লক্ষ্য পূরণে ছাড় দিতে নারাজ রাশিয়া

রাশিয়ার সেনা, ভ্লাদিমির পুতিন
ইউরোপ
বিদেশে এখন
1

ইউক্রেন ইস্যুতে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ন্যাটো জোট ও ইউরোপীয় নেতারা। অন্যদিকে ইউক্রেনকে নিজেদের বলে দাবি করা ছাড়াও রুশ প্রেসিডেন্টের চাহিদার তালিকা বেশ বড়। যেগুলো পূরণ করা মার্কিন প্রেসিডেন্টের একার পক্ষে সম্ভব নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাই ট্রাম্প-পুতিন মুখোমুখি হওয়ার পরও ইউক্রেনে প্রকৃত শান্তি ফেরার ব্যাপারে সম্ভাবনার চেয়ে শঙ্কাই বেশি বলে মনে করছেন অনেকে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে ১৯৯১ সালে ইউক্রেন স্বাধীনতা পাওয়ার পরও ২০১৪ ক্রিমিয়া দখল থেকে বোঝা যায় নিজেদের লক্ষ্য পূরণে ছাড় দিতে নারাজ রাশিয়া।

করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে, না উঠতেই; ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান পুরো বিশ্বকে ফেলে জ্বলন্ত উনুনে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে বিশ্বের খাদ্য ও জ্বালানি বাজারে।

সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বাড়তে থাকে গম, ভুট্টা, সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলসহ অধিকাংশ খাদ্যশস্যের দাম। জ্বালানির দাম হয় আকাশ ছোঁয়া। এক ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দর ওঠে ১০০ ডলারেরও বেশি। ঊর্ধ্বমুখীর মূল্যস্ফীতির চাপে টালমাটাল হয় পুরো বিশ্ব। কারণ খাদ্যশস্য ও জ্বালানি রপ্তানিতে আধিপত্য রয়েছে রাশিয়ার।

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে দিয়ে মস্কো তার লক্ষ্যে অটুট ছিলো সবসময়। যার জেরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ গড়িয়েছে চার বছরে। তবে এতদিনে অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কায় অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে সংকটে জর্জরিত দেশগুলো। তবুও শান্তির পথ বের করতে পারেনি কিয়েভ-মস্কো। শেষপর্যন্ত এই ইস্যুতে মুখোমুখি ট্রাম্প-পুতিন। এরপরও ইউক্রেনে প্রকৃত শান্তি ফেরার ব্যাপারে সম্ভাবনার চেয়ে শঙ্কার পাল্লাই বেশি বলে মনে করছেন অনেকে।

যুক্তি হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে পুতিনের চাহিদার শেষ নেই। যেমন পশ্চিমা সামরিক জোট- ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগ দেয়ার খায়েশে সবচেয়ে বড় আপত্তি পুতিনের। এছাড়াও আছে ইউক্রেন দখল করে নেয়া এবং দেশটির শাসন ক্ষমতায় পরিবর্তন আনার ইচ্ছা। এতকিছুর সমাধান কেবল একার পক্ষে দেয়া সম্ভব নয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের। কারণ ইউক্রেন ইস্যুতে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে, ন্যাটো জোট ও ইউরোপীয় নেতারাও।

ইউক্রেনের একজন সাধারণ নাগরিক বলেন, ‘১০ বছরের বেশি সময় ধরে এভাবেই চলে আসছে। তারা সবসময় মিথ্যা কথা বলে। তারা হত্যা থামাবে না। এ বৈঠক কিছুই করতে পারবে না। সন্ত্রাসী, মিথ্যাবাদী এবং অপরাধীদের বিশ্বাস করা যায় না।’

অন্য একজন বলেন, ‘পুতিন যুদ্ধ অপরাধী। তাই কোনো বিশ্বাস নেই। হাজার হাজার মানুষ এখনও রাশিয়ার কারাগারে। রাশিয়ানরা অধিকৃত অঞ্চল থেকে মানুষকে অপহরণ অব্যাহত রেখেছে।’

ইউক্রেনেরে স্থানীয় একজন বলেন, ‘আমি এখানে এসেছে কারণ আমার ছেলে এখনও বন্দী, তাকে ২০২২ সালের মে মাসে মাউরিপোলে বন্দী করা হয়েছিল। তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। আমার মনে হয় এখন সময় এসেছে, সমস্ত যুদ্ধবন্দীদের ফিরিয়ে আনার।’

আরও পড়ুন:

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে ইউক্রেনকে কেন নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে দেখতে চায় রাশিয়া? আর কেনোইবা ন্যাটোতে কিয়েভের যোগ দেয়ার ইচ্ছাকে নিজেদের জন্য ঝুঁকি মনে করে মস্কো? ইতিহাস বলছে, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার পর ইউক্রেন ক্রমেই পশ্চিমা দেশগুলোর ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। অথচ পুতিনের দাবি হচ্ছে ইউক্রেন কখনোই প্রকৃত রাষ্ট্র ছিল। তাই রাশিয়া ইউক্রেনের মানুষকে ‘এক জাতি’ হিসেবেও দেখেন তিনি।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর না করতে ২০১৩ সালে রুশ পন্থী ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের ওপর চাপও দিয়েছিলেন পুতিন। তখন প্রতিবাদের মুখে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতাচ্যুত হন ভিক্টর। ঠিক ওই বছরই ইউক্রেনের দক্ষিণের এলাকা ক্রিমিয়া দখলে নেয় রাশিয়া। এরপর ২০১৫ সালে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে মিনস্ক শান্তি চুক্তিতেও সংকট কাটেনি। এমনকি ন্যাটোকে ১৯৯৭ সালের আগের অবস্থায় ফিরে যেতে দাবিও জানিয়ে আসছেন পুতিন। বিপরীতে ন্যাটো জোট সম্প্রসারণ করায় ক্ষিপ্ত রুশ প্রেসিডেন্ট।

এদিকে প্রেসিডেন্ট পুতিনের নানামুখী দাবির ভীরে ইউক্রেনের চাওয়া বেশ পরিষ্কার। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইউক্রেনের নিরাপত্তার ব্যাপারে আইনি নিশ্চয়তার পাশাপাশি ইউক্রেন থেকে রুশ সেনাদের প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছেন। এছাড়া নিজেদের এক খণ্ড ভূমিও রাশিয়ার হাতে তুলে দিতে চান না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন জেলেনস্কি।

এসএস