বিশ্বের দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মারপ্যাঁচে এবার শাখের করাতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একদিকে রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল ক্রয়, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চহারে শুল্কারোপ এই দুয়ের মাঝ পড়ে উভয়ের সঙ্গেই বাণিজ্য ও কূটনৈতিক সম্পর্ক চ্যালেঞ্জের মুখে ভারতের। এ নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত রাশিয়া থেকে কম দামে তেল কিনলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক হুমকির মুখে পড়বে। যার অন্যতম উদাহরণ-এরইমধ্যে নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটনের মধ্যে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা স্বত্বেও গেলো আগস্টে ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। আর রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখলে এর হার আরও বাড়তে পারে বলেও হুঁশিয়ারি দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ভারত-রাশিয়ার এ তেল বাণিজ্য নিয়ে নতুন করে ধোঁয়াশা তৈরি করেছেন ট্রাম্প। বুধবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি বলেন, শিগগিরই ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফোন কলে তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এর কয়েক ঘণ্টা পরই এ ইস্যুটি অস্বীকার করেছে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র, রণধীর জয়সোয়াল জানিয়েছেন, এ নিয়ে তারা কিছুই জানেন না।
দিল্লিভিত্তিক থিংক ট্যাংক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের তথ্যমতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর মস্কোর ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ২০২১-২২ সালে রাশিয়া থেকে ৪ মিলিয়ন টন জ্বালানি তেল আমদানি করে ভারত। আর ২০২৪-২৫ সালে যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৭ মিলিয়ন টন। রাশিয়া থেকে উল্লেখযোগ্য হারে ডিসকাউন্টে তেল কেনায় বছরে গড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করে ভারত।
আর চাহিদার শীর্ষভাগ রাশিয়া থেকে পূরণ করায় স্বাভাবিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশগুলো থেকে তেল আমদানি কমিয়ে দেয় নয়াদিল্লি। এতে ক্ষতির মুখে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, কুয়েত, মেক্সিকো, নাইজেরিয়া ও ওমান।
এ পরিস্থিতিতে, ভারত যদি রাশিয়া থেকে তেল আবদানি বন্ধ করে দেয় এর ফায়দা নেবে যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। সেই সুযোগে আন্তর্জাতিক বাজারে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দেবে এসব দেশ। এমনটাই মত বিশ্লেষকদের। ভারতের খুচরা বাজারেও বাড়বে তেলের দর। এতে অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে পড়বেন নরেন্দ্র মোদি সরকার
অপরদিকে, ভারত যদি রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনা অব্যাহত রাখে তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তাদের রপ্তানি পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক দিতে হবে। এছাড়াও নয়াদিল্লির সঙ্গেও ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সম্পর্ক দিন দিন অবনতির পথে যাবে।





