রাতভর না ঘুমিয়ে মাত্র ১০ ঘণ্টায় বিক্ষোভের প্রস্তুতি নেন হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির শ'খানেক শিক্ষার্থী। আন্দোলনের খবর সংগ্রহে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে সংবাদকর্মীদের ঢুকতে দেয়নি হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ। বাইরে এসেই বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান প্রতিবাদের কারণ।
আন্দোলনকারীদের মধ্যে একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা দেখাতে চেয়েছি যে হার্ভার্ড ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। আমরা নতি স্বীকার করবো না। কোনো কারণ ছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করতে বা তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চাইলেই তা করা যাবে না।’
বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন তালিকায় এক থেকে চারের মধ্যে অবস্থান হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির। ১৬৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যার খ্যাতি কেবল মার্কিন ভূখণ্ডে নয়, চিকিৎসা, প্রযুক্তি থেকে শুরু করে নানা খাতে গবেষণা কার্যক্রম, উদ্ভাবন আর জনকল্যাণমূলক সম্পৃক্ততার জন্য সারা বিশ্বে সমাদৃত হার্ভার্ড।
ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভের জেরে গেলো মাসে হার্ভার্ডের সাথে সরকারের ৯০০ কোটি ডলারের চুক্তি ও অনুদান খতিয়ে দেখতে শুরু করে ট্রাম্প প্রশাসন। আটকে দেয় ২৩০ কোটি ডলারের সরকারি তহবিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা ব্যবস্থা, নিয়োগের ধরন, ভর্তি প্রক্রিয়ায় সংশোধন এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রশাসনকে হস্তান্তরসহ সরকারি হস্তক্ষেপ মানতে রাজি না হওয়ায় হার্ভার্ড চক্ষুশূল ইসরাইলপন্থি মার্কিন প্রেসিডেন্টের।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘এই দেশের যা কিছু ভালো, সব তিনি ধ্বংস করতে চাইছেন। আমাদের ইতিহাস, রাজনীতির সেরা দিকগুলো নষ্ট করে দিচ্ছেন তিনি।’
শুধু হার্ভার্ড নয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ইহুদি বিদ্বেষ ঠেকাতে ব্যর্থতার অভিযোগে বিশ্বের সবচেয়ে ধনাঢ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
উচ্চশিক্ষা খাতে হামলা, শিক্ষা-গবেষণায় বিপুল পরিমাণ বরাদ্দ বাতিল, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল এবং বাক স্বাধীনতায় আঘাতের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলি, নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটিতেও বিক্ষোভে যোগ দেন ৬শ' শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ ও অধিকারকর্মী।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একজন বলেন, ‘মানুষ আত্মসমর্পণ না করলে স্বৈরাচারের পক্ষে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় এবং আমরা আত্মসমর্পণ করবো না।’
অন্য একজন বলেন, ‘এটা আর শুধু রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ নেই। আমাদের জীবনের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। উচ্চ শিক্ষার ওপর আঘাত এলে আমরা নিরুপায়।’
চলতি মাসে কর্নেল ইউনিভার্সিটি ও নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির মোট ১৮০ কোটি ডলারের তহবিল বাতিল করে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ৪০ লাখ ডলারের তহবিল বরাদ্দের পর ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে নতি স্বীকার করে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের আটক; গেলো এক মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ১২৮টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিলসহ নানা ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন অনেক বিদেশি শিক্ষার্থী। এমন পরিস্থিতিতেও নিজ অবস্থানেই অনড় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলেন, ‘এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে খুব, খুব সতর্ক হতে হবে। কলাম্বিয়া, হার্ভার্ড, প্রিন্সটন- যেদিকেই তাকাবেন, তীব্র ইহুদি বিদ্বেষ দেখবেন। আমি জানি না কী চলছে সেখানে। কিন্তু তাদের আচরণ এবং অন্যান্য বিষয় এতটাই খারাপ যে আমাদেরও কঠোর হতে হচ্ছে।’
প্রয়োজনে হার্ভার্ডসহ বিভিন্ন মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের করমুক্তির সুবিধা বাতিলেও হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প।