শূন্য অভিজ্ঞতায় ‘ছক্কা’, কার্নিতে ট্রাম্পের ছায়া দেখছেন অনেকেই

উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

রাজনীতিতে শূন্য অভিজ্ঞতা নিয়েই ভোটের ময়দানে ছক্কা হাঁকিয়েছেন কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি। ঠিক যেভাবে প্রতিবেশি দেশে ধনকুবের ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। আর তাই, ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ মোকাবিলার পাশাপাশি কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক রক্ষায় কার্নিই সেরা বলে মনে করছেন বেশিরভাগ কানাডীয়। একই সাথে দেশে দেশে অর্থনীতি সামলানো কার্নির হাত ধরেই দেশটির অর্থনীতির গতি বাড়বে বলেও প্রত্যাশা তাদের।

কোটি কানাডীয় গতকাল (সোমবার, ২৮ এপ্রিল) ভোট দিয়েছেন দেশটির আগাম সাধারণ নির্বাচনে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ এবং কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য করার হুমকি মোকাবিলায় সক্ষম কে- প্রার্থী বাছাইয়ে এ বিষয়টিতেই গুরুত্ব দিয়েছেন প্রায় তিন কোটি ভোটার।

১০ বছর কানাডা সরকারের নেতৃত্ব দেয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো পদত্যাগ করার পর, ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টির নেতা মার্ক কার্নি আগাম নির্বাচন দিয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে জিতিয়েছেন দলকে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সাবেক ও ১২০তম গভর্নর কার্নির নেতৃত্বে ব্রেক্সিট ও করোনা মহামারিকালীন অর্থনৈতিক সংকট পার করে ব্রিটিশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটির ৩০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম নন-ব্রিটিশ কর্ণধার ছিলেন তিনি। এর আগে ব্যাংক অব কানাডারও গভর্নর ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সময় নিজ দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালনার ভার ছিল তার হাতে।

অন্যান্য প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীর তুলনায় মার্ক কার্নি ব্যতিক্রম, কারণ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে রাজনীতিতে তার অভিজ্ঞতা ছিল শূন্যের কোঠায়। তাও ট্রুডোর বিদায়ের পর উদারপন্থিদের মন জয় করে প্রথমবারের মতো দলের এবং এবার ভোটারদের নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে দেশের নেতৃত্বভার গ্রহণ করেছেন। নির্বাচনে জিততে বারবার তিনি তুলে ধরেছেন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় তার অভিজ্ঞতার কথা। সমর্থকরাও তাকে দেখছেন ট্রাম্পের আরোপিত বাণিজ্য যুদ্ধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সক্ষম নেতা হিসেবে।

কানাডীয় ভোটারদের মধ্যে একজন বলেন, ‘কানাডীয়রা চমৎকার কাজ করে দেখিয়েছে। আমার মনে হয় কার্নির যে অতীত, আন্তর্জাতিক বিষয়ে তার যে অভিজ্ঞতা, আমার পড়াশোনাও এ বিষয়ে, তাই কার্নির কথাই শুধু ভেবেছি আমি। ট্রাম্প ব্যবসায়ী, তিনি ব্যবসায়ী মানসিকতার লোক পছন্দ করেন। কার্নিও তেমনই।’

কার্নি সমর্থকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘কয়েক মাস আগে হলেও উদারপন্থিদের হার মেনে নিতে হতো। কিন্তু এখন আমরা জিতেছি। আনন্দিত, একইসঙ্গে উত্তেজিত। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছি।’

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্যে ভাটা পড়লেও কানাডার অর্থনীতির গতি ধরে রাখা প্রধান লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন কার্নি। কর্মজীবনে তিনি অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন সারা বিশ্ব থেকে। কানাডার প্রত্যন্ত ফোর্ট স্মিথ শহরে জন্মে কাজের সূত্রে দীর্ঘদিন ছিলেন নিউ ইয়র্ক, লন্ডন ও টোকিওতে। বৃত্তি নিয়ে বিশ্বসেরা হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে উচ্চশিক্ষা শুরু করেন, শেষ করেন আরেক সেরা অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণের মধ্য দিয়ে। তার গবেষণার বিষয় ছিল, দেশিয় প্রতিযোগিতা কোনো অর্থনীতিকে জাতীয়ভাবে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে পারে কি না। মার্কিন শুল্ক যুদ্ধের মুখে দাঁড়িয়ে কানাডার অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য সহজ করতে দেশটির রাজনীতিতেই এখন প্রাসঙ্গিক কার্নির এই গবেষণা।

ইউনিভার্সিটি অব টরোন্টোর রাষ্ট্রবিজ্ঞান সহযোগী অধ্যাপক অ্যান্ড্রু ম্যাকডুগাল বলেন, ‘গেলো কয়েক সপ্তাহে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে গল্প কিছুটা বদলেছে। তাই এই নির্বাচন আসলে এক ধরনের গণভোট ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে যাকে সেরা বলে মনে করছেন ভোটাররা, তাকেই বেছে নিয়েছেন। কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক রক্ষায় নিজেকে সেরা নেতা হিসেবে তুলে ধরতে খুব সহজেই সক্ষম হয়েছেন কার্নি।’

প্রায় এক দশক ধরে কানাডার উদারপন্থিরা মার্ক কার্নিকে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করলেও ৬০ বছর বয়সী এই কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব রাজনীতিতে আগ্রহ দেখান সাম্প্রতিক সময়ে। ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হন নিরঙ্কুশ সমর্থন নিয়ে; কানাডীয় পণ্যে শুল্ক আরোপ করা ট্রাম্পকে রুখতে সক্ষম সেরা যোদ্ধা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরে। বিপরীতে, ট্রুডোর আমলে কানাডা অভিবাসীবান্ধব থাকলেও নতুন অভিবাসী গ্রহণে চলমান লক্ষ্যমাত্রায় লাগাম টানার পক্ষে কার্নি। কানাডার আবাসন ও স্বাস্থ্য সংকট নিরসনের লক্ষ্যে অভিবাসী নেয়া সীমিত করতে চান তিনি।

এসএস