জাতিসংঘের ওপর আস্থা হারাচ্ছে বিশ্ববাসী!

জাতিসংঘ ভবন ও লোগো
উত্তর আমেরিকা
বিদেশে এখন
0

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন মানুষ। বৈশ্বিক নানা সমস্যা সমাধানে সংস্থাটির ভূমিকা কমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এ অবস্থায় সভা ও প্রতিবেদন কমিয়ে এনে সংস্কারের কথা ভাবছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।

বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘ ৫১টি রাষ্ট্র নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ১৯৩টি।

বছরের পর বছর ধরে সংস্থাটি দ্রুত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। বৈশ্বিক সমস্যা তুলে ধরা ও সমাধানের জন্য একমাত্র জাতিসংঘেই একত্রিত হতে দেখা যায় বিশ্বনেতাদের। ছয়টি অঙ্গসংগঠন ও বেশ কয়েকটি বিশেষায়িত সংস্থা দিয়ে সারাবিশ্বে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে সংস্থাটি।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের কার্যক্রম বিশ্বের জনগণের সামনে তুলে ধরতে সাধারণত প্রতি বছর বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ করে তারা। এরমধ্যে রয়েছে শিশু অধিকার, মানবাধিকার, জনসংখ্যা, অর্থনীতি, পরিবেশসহ আরও নানা ইস্যু। তবে এসব প্রতিবেদনে মানুষের আগ্রহ কমে গেছে বলে জানিয়েছে খোদ সংস্থাটিই। তাদের এক প্রতিবেদনে সম্প্রতি উঠে এসেছে এমন তথ্য।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘গেল বছর আমাদের ২৪০টি সংগঠন ২৭ হাজার বৈঠক করেছে। এক হাজার ১০০ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যা খুব বেশি মানুষ পড়ে না। শীর্ষ পাঁচ শতাংশ প্রতিবেদন সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশিবার ডাউনলোড করা হয়েছে। যেখানে অন্যান্য প্রতিবেদনগুলোর পাঁচটির মধ্যে কেবল একটি প্রতিবেদন এক হাজার বারের চেয়ে কম ডাউনলোড হয়েছে। অবশ্যই ডাউনলোড করা মানে এই নয় যে, এগুলো পড়া হয়েছে।’

গাজায় গেল প্রায় দুই বছর ধরে চলা ইসরাইলি আগ্রাসন বন্ধ করতে পারছে না সংস্থাটি। এমনকি ত্রাণ কার্যক্রম চালাতেও ব্যর্থ তারা। এছাড়াও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধবন্ধেও দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি জাতিসংঘ। এমন পরিস্থিতিতে নতুন এই প্রতিবেদন সংস্থাটির কার্যক্রমকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মত বিশ্লেষকদের।

সামরিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর মো. এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘গাজায় যেখানে হাজার হাজার মানুষ, বিশেষ করে ৬০ হাজারের ওপরে শিশু এবং অসংখ্য নারীরা নিহত হয়েছে, হত্যার শিকার হয়েছে। সেখানে কোনো ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারেনি। আমাদের সন্নিহিত অঞ্চলে আমাদের যে তিক্ত অভিজ্ঞতা, ১০ লাখের ওপর রোহিঙ্গা আট বছর ধরে বাংলাদেশে আছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘের ভূমিকা কেবলই বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে। রোহিঙ্গাদের যে সাহায্য সহযোগিতা সেটাও অর্ধেকে নেমে আসছে। একজন রোহিঙ্গাও প্রত্যাবর্তিত হয়নি। বরং আরও দুই থেকে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা আমাদের এখানে অনুপ্রবেশ করেছে। সম্প্রতি ইরান-ইসরাইল যুদ্ধেও জাতিসংঘ ইরানকে কোনো নিরাপত্তা দিতে পারেনি।’

আসছে অক্টোবরে সংস্থাটি ৮০ বছরে পা রাখছে। নানা সমালোচনা সত্ত্বেও জাতিসংঘ তার মূল উদ্দেশ্য- বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা- অর্জনে এখনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে বলে মনে করেন অনেকে। তবে বড় শক্তিগুলোর দ্বন্দ্ব ও কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে এর কার্যকারিতা অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলেও মত বিশ্লেষকদের।

মেজর মো. এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘পৃথিবীর ১৯৩ থেকে ১৯৪টি দেশের মধ্যে যদি ১৯০টি দেশও একপক্ষে ভোট দেয় শুধু একজন মাত্র আমেরিকা ভেটো দিলো, সেটা আর কার্যকর হচ্ছে না। কারণ সাধারণ মানুষ এগুলো প্রত্যক্ষ করতে করতে এখন জাতিসংঘের প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকার কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।’

এমন পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ সংস্কারের কথা ভাবছেন মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সভা ও প্রতিবেদনের সংখ্যা কমিয়ে এনে মূল লক্ষ্যের দিকে গুরুত্ব দিতে চায় সংস্থাটি।

এসএস