জাল কাবিননামা বানিয়ে ‘মিথ্যা স্বামীর’ বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা; অতঃপর আদালতে ধরা

আইন ও আদালত
0

কাবিননামা জাল, স্বামীও মিথ্যা। এসব করে মামলা দিয়ে অর্থ আদায় করাই যেন পেশা। সরকারি এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জাল কাবিননামা বানিয়ে যৌতুকের মামলা দিয়ে আদালতকে বিভ্রান্ত করায় স্বপ্রণোদিত হয়ে অভিযুক্ত সেই নারীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন আদালত।

ইসমাঈল হোসেন, পেশায় সরকারি চাকরিজীবী। ৩ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে মারধর করেছেন— এমন অভিযোগে ২০২৪ সালের আগস্টে তার বিরুদ্ধে ঢাকার লালবাগের আমলি আদালতে যৌতুক ও নির্যাতনের মামলা করেন কথিত স্ত্রী সেলিনা বেগম।

কাবিননামার তথ্যমতে, ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল তালাকপ্রাপ্ত এক কন্যা সন্তানের জননী সেলিনা বেগমকে ৭ লাখ টাকা কাবিনে বিয়ে করেন ইসমাঈল। আর তাকে যৌতুক হিসেবে দেয়া হয় ১ ভরি স্বর্ণের চেইনসহ ১ লাখ টাকা।

প্রায় এক বছর পর, মামলাটি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তারের আদালতে বিচারের জন্য আসে। ঠিক তখনই ঘটনার মোড় ঘুরে যায়। কথিত স্ত্রী সেলিনা বেগমের দাখিল করা কাবিননামা জাল দাবি করে চ্যালেঞ্জ করেন ইসমাঈল। এনিয়ে সন্দেহ হয় আদালতেরও। পরে হবিগঞ্জের লাখাই থানা এলাকার সংশ্লিষ্ট কাজী আব্দুল কাইয়ুমকে তলব করেন আদালত। পরে ফাঁস হয় কাবিননামা বানানো হয়েছে কাজীর সিল-স্বাক্ষর নকল করে। এ বিষয়ে কাজী আব্দুল কাইয়ুমও লাখাই থানায় জিডি করেন।

ইসমাঈলের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, মিথ্যা মামলার জড়িত হয়েও মানসম্মান ক্ষুণ্ন হওয়ার ভয়ে টাকা দিয়ে বিষয়টি মীমাংসাও করতে চেয়েছিলেন। তারপরও তাকে নানাভাবে হুমকি-হয়রানি করা হয়েছে।

অভিযুক্ত সেলিনার আইনজীবী মিঠুন চৌধুরী বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি বিব্রত। এদিকে সেলিনা পলাতক। কাবিননামা নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেয়া হয়েছে কি না, যাচাই-বাছাই করা সম্ভব হয়নি।’ তবে, তার ওকালতনামায় কীভাবে মামলা হলো, সে বিষয়ে তিনি দায় এড়িয়ে যান।

এদিকে, আসামিকে মিথ্যা স্বামী বানিয়ে আদালতকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশে যৌতুকের মামলা দেয়ায় অভিযুক্ত সেই নারীর বিরুদ্ধে সপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তারের আদালত। মামলায় বলা করা হয়, এটি হবে দৃষ্টান্ত। কোতোয়ালি থানাকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়।

জজ কোর্টের আইনজীবী এইচ এম রুহুল আমিন মোল্লা বলেন, ‘এ ধরনের মিথ্যা মামলা দিয়ে নিরীহ মানুষকে ফাঁসানোর মূল উদ্দেশ্যই থাকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া। সঠিকভাবে বিচার হলে এ ধরনের মিথ্যা মামলা থেকে বেঁচে যাবেন অনেক নিরীহ মানুষ।’

প্রতারণার বিষয়টি আদালতের নজরে আসার পর থেকেই পলাতক অভিযুক্ত সেলিনা বেগম। মামলায় যুক্ত করা তার ব্যক্তিগত ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।

সেজু