৯৪ একরের আল ওয়াতান প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ

ফিচার স্টোরি
জীবনযাপন
0

প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার প্রাসাদে বসবাস একটি পরিবারের, রয়েছে ৭শ' টি বিলাসবহুল গাড়ি, ৮টি ব্যক্তিগত বিমান। বিশ্বের তেল মজুদের প্রায় ৬ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে এই পরিবারের। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবচেয়ে ধনী পরিবার তো বটেই, বিশ্বেরও অন্যতম শীর্ষ ধনীর তালিকায় রয়েছেন শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের পরিবার।

মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী দেশ আরব আমিরাত। দুবাই শহরের শান শওকত দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যাবে যে কারও। বিলাসবহুল জীবনযাপন, চাকচিক্য, আভিজাত্যের কারণে বিশ্বের বড় বড় ধনীদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য ইউএই। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের মতো সংযুক্ত আরব আমিরাতও জ্বালানি তেলের অন্যতম ভান্ডার। হিসেব বলছে, গেল বছর জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে প্রায় ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে দেশটি। বর্তমানে জ্বালানি তেলের উপর নির্ভরশীল না থেকে অর্থনীতির বহুমুখীকরণে জোর দিয়েছে ইউএই।

ধনী ব্যক্তি বা পরিবারের বিলাসবহুল জীবনযাপন, চাকচিক্য, আধিপত্যর ক্ষেত্রেও প্রথমেই নাম আসবে আরব আমিরাতের। অঢেল সম্পদ, রাজকীয়তা ও আভিজত্যের দিক দিয়ে শীর্ষে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। বিশ্বের শীর্ষ ধনী এই পরিবারে নাহিয়ানের রয়েছে ১৮ ভাই ও ১১ জন বোন। নাহিয়ানের ৯ সন্তানের ঘরে রয়েছেন ১৮ জন নাতি-নাতনি। সবমিলিয়ে তার পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৫৬ জন।

|undefined

আল নাহিয়ানের পরিবার। ছবি: সংগৃহীত

আবুধাবির কাসর আল-ওয়াতান প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে বসবাস এই রাজপরিবারের। প্রায় ৯৪ একরজুড়ে বিস্তৃত ও বৃহৎ গম্বুজ বিশিষ্ট প্রাসাদটির বাজারমূল্য প্রায় ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। রাজকীয় প্রাসাদটি যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি পেন্টাগন ভবনের সমান। নান্দনিক নির্মাণশৈলির পাশাপাশি প্রাসাদে রয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৩৫ হাজার ক্রিস্টাল ঝাড়বাতি ও প্রত্নতত্ত্ব।

|undefined

আবুধাবির কাসর আল-ওয়াতান প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি জেরুজালেম পোস্টের এক প্রতিবেদন বলছে, আল-নাহিয়ান পরিবারের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ও আমাজনের প্রতিষ্ঠাতার জেফ বেজোসের মোট সম্পদের চেয়েও বেশি। আল নাহিয়ান পরিবারের রয়েছে ৮টি বিমান। এর মধ্যে রয়েছে একটি এয়ারবাস এ৩২০-২০০ , তিনটি বোয়িং ৭৮৭-৯ । এ ছাড়া শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ানের নিজের সংগ্রহে রয়েছে বোয়িং ৭৪৭। যেটির বাজার মূল্য প্রায় ৪৭৮ মিলিয়ন ডলার। এর বাইরে, বিশ্বের যতগুলো বৃহৎ প্রমোদতরী রয়েছে, তার তিনটি এই পরিবারের দখলে।

|undefined

আবুধাবির কাসর আল-ওয়াতান প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের ভেতরের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

আরব আমিরাতের সীমানা ছাড়িয়ে নাহিয়ান রাজপরিবারের সম্পদ রয়েছে প্যারিস এবং লন্ডনেও। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই আছে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা। ২০০৮ সালে যুক্তরাজ্যের ফুটবল দল ম্যানচেস্টার সিটিকে দুই হাজার ৮০৩ কোটিতে কিনে নেন আবুধাবি ইউনাইটেড গ্রুপ। রাজপরিবারের এই কোম্পানিটি সিটি ফুটবল গ্রুপের ৮১ শতাংশের মালিক। এছাড়া ম্যানচেস্টার সিটি, মুম্বাই সিটি, মেলবোর্ন সিটি ও নিউ ইয়র্ক সিটি ফুটবল ক্লাবও পরিচালনা করছে নাহিয়ান রাজ পরিবার। এছাড়া বিশ্বের তেলের মজুতের প্রায় ছয় শতাংশের মালিকও তারা।

প্রেসিডেন্টে আল নাহিয়ানের ছোট ভাই শেখ হামাদ বিন হামদান আল নাহিয়ানের কাছে আছে ৭০০টিরও বেশি বিলাসবহুল গাড়ি। যারমধ্যে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এসইউভিসহ পাঁচটি বুগাতি ভেরন, একটি ল্যাম্বরগিনি রেভেনটন, একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ, ফেরারি ৫৯৯এক্সএক্স ও একটি ম্যাকলারেন এমসি ১২। হিসেব বলছে গেল ৫ বছরে নাহিয়ান পরিবারের বিভিন্ন কোম্পানির মূল্য বেড়েছে প্রায় ২৮ হাজার শতাংশ। বর্তমানে ২৩৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের কোম্পানিটির বিনিয়োগ রয়েছে কৃষি, জ্বালানি, বিনোদন ও সামুদ্রিক ব্যবসায়। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হয়েছে লাখো মানুষের।

|undefined

১৯৭১ সালে শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানকে প্রেসিডেন্ট করে সংযুক্ত আরব আমিরাত গঠিত হয়। ২০০৪ সালে শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান সংযুক্ত আরব আমিরাতের নতুন প্রধান হিসেবে তার বাবার স্থলাভিষিক্ত হন। আর শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ ২০২২ সালে আরব আমিরাতের তৃতীয় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন।

সেজু