স্বাস্থ্যখাতের দুষ্ট দুর্নীতির চক্রে মানুষ নিরুপায়। বিনা চিকিৎসা, সেই সঙ্গে মানহীন চিকিৎসার অভিযোগ ভূরি ভূরি। লাগামহীন বেসরকারি খাতের উচ্চ ব্যয়। সরকারি হাসপাতালে দালালের দৌরাত্ম্য। শয্যার চেয়ে রোগী বেশি। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে এখনও চিকিৎসা ব্যবস্থা ঢাকা কেন্দ্রিক। সামর্থ্যবানদের গন্তব্য বিদেশে।
এই বাস্তবতায় স্বাস্থ্যখাতের আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান।
সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে শহর ও গ্রামে বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত, বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস গঠন, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অ্যাকাডেমিক ও সার্ভিস হাসপাতাল হিসেবে ভাগ করে তাদের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ স্ব স্ব বিভাগে থাকার সুপারিশের পাশাপাশি নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপনের আগেই দক্ষ ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ নিশ্চিত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোকে বেসরকারি সংস্থার হাতে ছেড়ে দেয়ারও সুপারিশ করেছে কমিশন।
স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা যেন মানুষ ফ্রি পেতে পারে তার জন্য এখনই একটা আইন করতে হবে।’
প্রতিটি নাগরিকের জন্য ইউনিক স্বাস্থ্য আইডি ও স্মার্ট স্বাস্থ্য কার্ড চালু করতে হবে যেখানে সেবাগ্রহণকারীদের স্বাস্থ্যের সকল তথ্য রেকর্ড থাকবে। তবে সেবার মান বাড়ানোর লক্ষ্যে পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে স্বায়ত্তশাসিত বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস গঠন প্রস্তাব করা হয়েছে। বলা হয়েছে, নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপনের আগেই দক্ষ ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ নিশ্চিত করতে।
অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, ‘মানসম্মত ও মেধাসম্পন্ন লোক আকৃষ্ট হয় সেজন্য তাদের জন্য আলাদা পেস্টক করতে হবে।’
স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, সবচেয়ে কঠিন কাজ হলো বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস গঠন করা। কারণ এখানে অন্যান্য যে সার্ভিসগুলো আছে পরিবার পরিকল্পনা বা নার্সিং। এগুলোকে সমন্বিত করতে হবে।’
বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সকল সেবার মূল্য নির্ধারণ, তদারকি ও মান নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ করা হয়েছে। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা চিকিৎসকের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে ওষুধের প্রমোশন করতে পারবে না।
সেবার বিকেন্দ্রীকরণে প্রতিটি বিভাগে আন্তর্জাতিক মানের একটি আঞ্চলিক রেফারেল হাসপাতাল গড়ে তোলার পাশাপাশি সারাদেশের মানহীন হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ বন্ধের সুপারিশ করেছে কমিশন। সেই সঙ্গে দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, সদর হাসপাতালে ফিজিওথেরাপি বিভাগ ও ফিজিও থেরাপিস্ট পদ সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া বাজেট বরাদ্দ ও দালাল দমনে গুরুত্ব দিয়েছে কমিশন।
অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা বৃদ্ধি, জাতীয় নারী স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠাসহ যাবতীয় সুপারিশ বাস্তবায়নে অন্তত দুবছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছে সংস্কার কমিশন।