ড. মাহদী আমীন আরো বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সবুজ বিপ্লবের যে পরিকল্পনা করেছিলেন, তা বাস্তবায়ন করা হবে। দেশব্যাপী সবুজায়ন বাড়াতে এরইমধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গাছ লাগানোর কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।’
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘তরুণের শক্তিই পারে জলবায়ু ও পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে।’
এরইমধ্যে তার দল ইশতেহার নিয়ে কাজ শুরু করেছে বলে জানান তিনি। তবে তরুণরা যদি নিজেদের অভ্যাস না বদলায় বা দায়িত্বশীল না হয়; তাহলে বাজেট বা ইশতেহারে যতই গুরুত্ব দেয়া হোক, জলবায়ু পরিবর্তন বা পরিবেশ দূষণ কোনোটাই রোধ করা যাবে না বলেও জানান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এখন সময় এসেছে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে এক ছাতায় আসার। কারণ সময় যত যাচ্ছে বাংলাদেশ ততই জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে পড়েছে। নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি বিষয়টি গুরুত্ব দেবে।’
তবে যারা নদ-নদী-খালবিল দখল করছে, বন উজার করছে তারা আগামী নির্বাচনে যে প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করুক না কেন, তাদের যেন তরুণরা ভোট না দেয় সেই আহ্বান জানান সাইফুল হক।
‘ম্যানিফেস্টু টক’ এর কনভেনর হাবিব রহমান বলেন, ‘তরুণদের সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কাজ করলে পরিবেশ বিপর্যয় থেকে মুক্ত হতে পারবে বাংলাদেশ।’
ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনেও আমাদের দলে জলবায়ু ও পরিবেশের বিষয়টি নির্বাচনী ইশতেহারে গুরুত্ব সহকারে রাখা হয়েছিল। সামনের নির্বাচনেও তরুণদের এই আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন করবে।’
তবে যদি আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় নাও যেতে পারে তার দল, তবু তরুণদের এই দাবির সঙ্গে কাজ করবে এনডিএম।
‘ম্যানিফেস্টু টক- ইয়ুথ-ক্লাইমেট এন্ড এনভায়রনমেন্ট’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন এখন শুধু বাংলাদেশর ইস্যু নয়, এটি বৈশ্বিক সংকট। উন্নত দেশগুলোর কারণে আমাদের মতো নিম্নআয়ের দেশ ক্ষতির মুখে পড়ছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে এখন ভাবতে হবে কীভাবে এই সংকট কাটাতে তরুণদের যুক্ত করা যায়।’
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘রাজধানী ঢাকা এখন পরিবেশ বিপর্যযের শীর্ষে। মানুষের সচেতনতা বাড়াতে না পাড়লে শুধু রাজনৈতিক ম্যানিফেস্টুতে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলে সমাধান আসবে না।’
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি ও পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবিলায় তরুণদের দাবিগুলোর সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন গণ সংহতি আন্দোলনের নেতা আবুল হাসান রুবেল। জানান, ২০১৮ সালে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রথম দিকে রাখা হয়েছিল জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের বিষয়টি। পরিবেশ রক্ষা করতে না পারলে শুধু ভোট দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেয়ার সুযোগ নেই বলে জানান গণ সংহতির নির্বাহী কো-অর্ডিনেটর আবুল হাসান রুবেল।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র জয়েন্ট কনভেনর আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, ‘দখলদাররা কোনো না কোনোভাবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পরিবেশ, নদী, খাল,বিল, বন ধ্বংস করছে। তরুণদের নেতৃত্বে গড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি সব সময় তরুণদের চাওয়া পাওয়াকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে। পরিবেশ বিপর্যয় হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না এনসিপি।’
আলোচনা সভার প্রধান অতিথি বন পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। বায়ু দূষণ, নদী দখলরোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। দখলদারদের ছাড় দেয়া হবে না। তবে এই সংকট মোকাবিলা করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোরও সহযোগিতা দরকার। কাজ করতে গিয়ে তরুণরা যেন অর্থের লোভে পড়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
সব বিষয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখার পরামর্শ দেন বন পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ তরুণদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে জানান, পরিবেশ রক্ষায় তার সংস্থা কাজ করছে। কিন্তু একটি মহল তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। রাজনৈতিক দলগুলো থেকেও তেমন সহায়তা মিলছে না বলে অভিযোগ করেন উত্তরের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। রাজধানীকে রক্ষা করতে হলে চারপাশের নদীগুলোকে রক্ষা করতে হবে। রাজধানীতে সবুজ বাড়াতে তরুণদের নিয়ে এরইমধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশন কাজ শুরু করেছে বলে জানান প্রশাসক এজাজ।
গণমাধ্যমকর্মীরা জানান, বন, নদী হাওড়, বাওড় দখলদাররা রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে জড়িত। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে স্পষ্ট করে সিদ্ধান্ত জানাতে হবে নির্বাচনী ইশতেহারে।
অনুষ্ঠানের শেষে প্রাণী ও মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আকতার বলেন, ‘হাওর-বাওড় টিকে থাকলে বাংলাদেশও টিকে থাকবে। সবাইকে নিয়ে এ ধরনের আলোচনা আরও বেশি বেশি করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে হবে আর সেটা তরুণদের দ্বারাই সম্ভব হবে।’
ম্যানিফেস্টু টক- ইয়ুথ-ক্লাইমেট-এনভায়রনমেন্ট শীর্ষক ডায়ালগটি আয়োজন করে সচেতন ফাউন্ডেশন, ব্রাইটার্স, সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরী, রিসার্চ এন্ড ডায়ালগ, সেন্টার ফর এটমোশফেয়ার পলুশন স্টাডিস, সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড এনভায়রনমেন্ট রির্সাচ, হিউমেন, সেফটি ফাউন্ডেশনসহ মোট ১৫টি পরিবেশবাদী সংগঠন।