মার্কিন ভিসা নীতির বদলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কা, বিকল্প খুঁজছেন অনেকে

বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি শিক্ষার্থীরা
শিক্ষা
দেশে এখন
0

বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা ইস্যুতে মার্কিন প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্তে বাড়ছে স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কা। মার্কিন মুল্লুকে থাকা শিক্ষার্থীরাও আছেন দুশ্চিন্তায়। অনেকে ইউরোপের দেশ বেছে নিলেও ভারতের মাল্টিপল ভিসা জটিলতা রয়েছে। বিভিন্ন দেশের অভিবাসন ও শিক্ষা ব্যবস্থা কিছুটা কঠোর হলেও দুশ্চিন্তা দেখছেন না খাত সংশ্লিষ্টরা। এখনও অনেক উন্নত দেশেই পড়তে যাওয়ার সুযোগ অবারিত রয়েছে বলে দাবি তাদের।

উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এসব শিক্ষার্থীরা। বিদেশে অধ্যয়নে ইংরেজি ভাষাগত দক্ষতা প্রয়োজন হওয়ায় নিজেদের প্রস্তুত করছেন তারা। কোর্স ও পরীক্ষা শেষেই স্বপ্নের দেশে যেতে আবেদন শুরু করবেন শিক্ষার্থীরা। উচ্চশিক্ষায় যাদের বেশিরভাগেরই পছন্দের শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ ইউরোপ বিভিন্ন দেশ।

সম্প্রতি বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা ইস্যুতে মার্কিন প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্তে হতাশ যুক্তরাষ্ট্রে যেতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা। বাড়ছে স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কা। এখন কী করবেন তা নিয়ে ভুগছেন সিদ্ধান্তহীনতায়।

শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, ‘পছন্দের জায়গা ছিল আমেরিকা। বর্তমানে যে পলিসি হচ্ছে তার জন্য নতুন দেশ তালিকায় আনতে হচ্ছে।’

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য মার্কিন ভিসা সাময়িকভাবে বন্ধের প্রভাব পড়েছে বিশ্বজুড়েই। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরালের অফার লেটার পেয়েও তা বাতিল করেছেন কানাডায় থাকা এক বাংলাদেশি।

যদিও ভিসা আগেই পেয়ে যাওয়ায় মার্কিন মুল্লুকের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদের পরেই পাড়ি জমানোর পরিকল্পনা তার। তারপরও ট্রাম্পের নানামুখী পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা ও অভিবাসন নিয়ে শঙ্কা কাটেনি শিক্ষার্থীদের।

কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বায়োইনফরমেটিকস সাইনটিস্ট ড. রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘এবছর যারা আমেরিকা যাবে বা যেতে চাচ্ছে তাদের আসলে ট্রাম্প প্রশাসনের দিকগুলো বিবেচনায় রেখে এই অনিশ্চয়তায় যেতে হবে। আর এই বাস্তবতা মাথায় নিয়ে আমি আসলে এই বছর যাওয়ার পরিকল্পনা করছি।’

এদিকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে শঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যয়নে থাকা বাংলাদেশি পিএইচডি শিক্ষার্থীরাও।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. রহমান নাসির উদ্দিন বলেন, ‘হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতা আসলে ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে আসলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

বিদেশি শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহকারী সংস্থা ওপেন ডোরসের হিসাব বলছে, করোনা পরবর্তী সময়ে প্রতি বছরই যুক্তরাষ্ট্রগামী শিক্ষার্থী বেড়েছে ধারাবাহিকভাবে।

২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ২১০টিরও বেশি দেশের ১১ লাখেরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হলেও শীর্ষে ছিল এশিয়ার পাঁচ দেশ ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনাম।

তালিকার ৮ নম্বরে থাকা বাংলাদেশ থেকে ২৩-২৪ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গেছেন ১৭ হাজার ৯৯ জন শিক্ষার্থী।

শুধু যুক্তরাষ্ট্রগামী শিক্ষার্থীরাই নয়, সম্প্রতি অভিবাসন ইস্যু ও ভিসানীতিতে আরও কঠোর অবস্থানে যুক্তরাজ্য ও কানাডা। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশে উচ্চশিক্ষার গণ্ডি ছোট হচ্ছে অনেকে শিক্ষার্থীর।

পাশাপাশি ইউরোপের বিভিন্ন দেশের দূতাবাস দিল্লিতে হওয়ায় সময়মতো মিলছে না মাল্টিপল ভিসা। যারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পড়তে যাওয়ার আবেদন করেছেন তারাও পড়েছেন জটিলতায় ।

ইউরোপে আবেদন প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের একজন বলেন, ‘আমরা আরেকটি দেশ দেখার চেষ্টা করছি।’

আরেকজন বলেন, ‘আমি ইউকে পছন্দ করে রেখেছে।’

তবে বিভিন্ন দেশের অভিবাসন ও শিক্ষা ব্যবস্থা কিছুটা কঠোর হলেও দুশ্চিন্তা দেখছেন না খাত সংশ্লিষ্টরা। কিছু সময় লাগলেও নিয়ম মেনে আবেদন করলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলায় আইইএলটিএস অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সেন্টারের সিইও রাশেদ হোসেন বলেন, ‘এইটা শর্ট টার্ম আসলে। সোশ্যাল মিডিয়াতে আসলে কিছু সময় দেখছে। যারা ফলে তারা এই রুলস তৈরি করেছে। এর ফলে এখন বন্ধ আছে। তবে আমরা যতদূর জানতে পারছি এইটা এই বছরের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে।’

দেশে চাকরির বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতা, সন্তোষজনক বেতন কাঠামো নিয়েও নানা চ্যালেঞ্জ বাড়ছে দিনকে দিন। অন্যদিকে বিদেশে পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন আয়; এরপর চাকরি ও সবশেষে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ। সব মিলিয়ে দূরদেশে উন্নত জীবনের হাতছানি। তাই সব বাধা পেরিয়ে স্বপ্নের খোঁজে উড়াল দিতে ডানা মেলার অপেক্ষা অভিবাসনপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের।

সেজু