স্মৃতির পাতায় বন্দী ক্যামেরা, ছবি সম্বলিত পরিচয়পত্র, রেকর্ডার ও হাতঘড়ি। সংবাদ সংগ্রহের জন্য এসব নিয়েই ছুটতেন পথে-প্রান্তরে। সংগৃহীত তথ্য যে টেবিল বসে সম্পাদনার কাজ করতেন তাও আছে। শুধু নেই সেই টেবিলে বসে কিবোর্ডে খটখট শব্দ তোলা মানুষটি এ টি এম তুরাব।
১৯ জুলাই ২০২৪, সিলেটের কোর্ট পয়েন্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে। স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত রাজপথ। পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বাঁধে ছাত্র-জনতার। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীদের দমাতে গুলিবর্ষণ করতে থাকে পুলিশ।
আমৃত্যু সাংবাদিকতা করা তুরাব ভয়ডর ও গুলিবর্ষণ উপেক্ষা করেই পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হন সাংবাদিক এ টি এম তুরাব। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন সহকর্মীরা। কিন্তু, বাঁচানো যায়নি তুরাবকে।
তুরাবের পরিবারের সদস্যদের এখন সময় কাটে তার স্মৃতি আঁকড়ে, স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে। তার নিহতের ঘটনায় বছর পেরোলেও মামলার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে হতাশ শহিদ পরিবারের সদস্যরা।
শহিদ তুরাবের বড়ভাই আবুল আহসান মো. আজরফ বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। নতুন বাংলাদেশের জন্য আমাদের পরিবার যে অবদান রাখতে পেরেছে এটাই আমাদের সার্থকতা। প্রকাশ্য দিবালোকে তাকে হত্যা করা হয়েছে, ভিডিও ফুটেজ আছে, সব প্রমাণ আছে যারা এভাবে হত্যা করেছে তাদের যেন শাস্তির আওতায় আনা হয়।’
তুরাবের মৃত্যুর পর মামলা হলেও অপরাধীদের কেন আইনের আওতায় নেয়া হচ্ছে না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিলেটর সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মূকতাবিস উন নূর বলেন, ‘এখানে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র ছিলো। আমরা বলি তুরাবকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। প্রকৃত অপরাধী যে বা যারাই হোক তাদের যেন সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়।’
শহিদ তুরাব শুরুতে যোগ দেন ফটো সাংবাদিক হিসেবে। পরে নিজ মেধা ও যোগ্যতায় হয়ে ওঠেন একটি জাতীয় দৈনিকের স্টাফ রিপোর্টার। সিলেটের সাংবাদিক পাড়ায় খ্যাতি ছিলো উদীয়মান সাংবাদিক হিসেবে। বিয়ের মাত্র দেড় মাসের মাথায় প্রাণ হারানো তুরাব স্বজন ও প্রতিবেশীদের কারও কাছে ছিলেন পরম স্নেহের আবার কারও কাছে ছিলেন পরম শ্রদ্ধার।
এলাকাবাসী জানান, বিয়ের মাত্র দেড় মাস পরেই নিহত হন তুরাব। অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে তুরাবকে। তার হত্যার বিচার দাবি করেন এলাকাবাসীরা।
সময়ের সঙ্গে শুকিয়ে গেছে শহিদ সাংবাদিক তুরাবের রক্তের দাগ। পালাবদল হয়েছে ক্ষমতার কিন্তু স্বজনদের অপেক্ষা কেবল ন্যায়বিচারের।