হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার প্রতিবাদ মিছিলে অচল হয়ে পড়ে বন্দরনগরীর রাজপথ। মিছিল, স্লোগানে উত্তাল নিউমার্কেট, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর এলাকা। কোটা সংস্কার আন্দোলন পরিণত হয় স্বৈরাচার সরকার পতনের আন্দোলনে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সাবেক সমন্বয়ক পুষ্পিতা নাথ বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনটা শুরু হয় মূলত ৬ জুলাই থেকে। ওইসময় আমাদের আন্দোলনটা সাধারণ আন্দোলনের মতোই ছিলো। কিন্তু ১১ জুলাই পুলিশ প্রথম অ্যাটাক করে চট্টগ্রামে, এরপর ১৫ জুলাই অ্যাটাক করে ঢাকায়। এরপর ধীরে ধীরে বিষয়টা সরকার পতনের দিকেই যায়।’
জুলাই আগস্টে আন্দোলনের তীর্থভূমিতে পরিণত হয় ষোলশহর রেল স্টেশন, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট এলাকা। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশের হামলার মুখে ২০ দিনেরও বেশি সময় প্রতিরোধ গড়ে তুলেন শিক্ষার্থীরা। সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম আকরাম, ছাত্রশিবির কর্মী ফয়সাল আহমেদ শান্ত, দোকানদার ফারুক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হৃদয় তরুয়াসহ অন্তত ৮ জন শহিদ হন সেখানে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম আহবায়ক চৌধুরী সিয়াম ইলাহী বলেন, ‘১৫ তারিখে আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট ছিলো। চট্টগ্রামে আমরা যখন কর্মসূচি দিয়েছিলাম ষোলশহরে তখন ছাত্রলীগ আমাদের ভাইদের হত্যা করেছিল। আমাদের ওয়াসিম আকরাম, ফয়সাল মাহমুদ শান্ত এবং একজন শ্রমিক ওমর ফারুক শহিদ হন। তখনই আমাদের মনে হয় এ আন্দোলন আর কোটাবিরোধী আন্দোলনে নেই, এটা বাংলাদেশের প্রতিটা নাগরিকের অস্তিত্বের আন্দোলনে রূপ নেয়।’
আগস্টের শুরুতে বন্দর নগরীর নিউমার্কেট ও আদালত পাড়া হয়ে উঠে আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। ৪ আগস্ট অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিতে সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেট মোড়ে জড়ো হতে থাকে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ। সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়ে শতাধিক ছাত্র ও সাধারণ মানুষ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন।
এনসিপি যুবশক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক তানজিদ রহমান বলেন, ‘চট্টগ্রামে আন্দোলনে সবচেয়ে ভয়াবহ দিন ছিলো ১৮ জুলাই। যখন আমরা নতুন ব্রিজে অবস্থান করি তখন পুলিশ, আর্মি, ছাত্রলীগ, যুবলীগ একসাথে আমাদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে, বড় বড় ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা আমাদের পরবর্তী কর্মসূচী নির্ধারণ করতে না পেরে আমরা সেখান থেকে বিচ্ছিন্নভাবে ছিটিয়ে যে যার মত পালিয়ে যাই। পরবর্তীতে আমরা অবস্থান গ্রহণ করি বহদ্দারহাট।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুর রহমান বলেন, ‘মনে হচ্ছিলো যেন যুদ্ধের মাঠ। তারা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। সেখানে তারা আমাদের ওপর হামলা চালায় সরাসরি পেটোয়া বাহিনীসহ। যখনই আমাদের ভাইদের এভাবে মারা হচ্ছিলো, হত্যা করা হচ্ছিলো তখন আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আর বসে থাকতে পারিনি। আমরা মাঠে এসেছিলাম শুধু বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য।’
চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ছাত্রজনতার রক্তভেজা আন্দোলনে ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। নিউমার্কেট চত্বর, মুরাদপুরের ফ্লাইওভার কিংবা আদালতের লাল ভবন সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক সে আন্দোলনের।