উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নাকি আদিবাসী? ঠিক কোন শব্দে সংজ্ঞায়িত করা হবে তা নিয়ে বিতর্ক বহু পুরোনো। তবে সংবিধানের ২৩-ক অনুচ্ছেদে উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও নৃগোষ্ঠী উল্লেখ রয়েছে। এছাড়াও পার্বত্য শান্তিচুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে ‘উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল’ হিসেবে বর্ণিত আছে। আঞ্চলিক ও জেলা পরিষদের বিভিন্ন ধারায় ‘উপজাতি’ শব্দটি বলবৎ থাকবে বলে উল্লেখ রয়েছে।
আক্ষরিক অর্থে আদিবাসী শব্দের অর্থ ভূমিপুত্র। অর্থাৎ যে ভূমিতে তাদের অবস্থান সেই ভূমির আদি বাসিন্দা। যদিও সরকার কখনোই কাগজে-কলমে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের এ ভূমির আদি অধিবাসীর স্বীকৃতি দেয়নি এমনকি ‘আদিবাসী’ শব্দটিও গ্রহণ করেনি। সে জনগোষ্ঠীর পরিচয়ে লেখা হয়েছে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ হিসাবে।
বাংলাদেশে এই সংখ্যা প্রায় ১৭ লাখ। যা দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর প্রায় এক শতাংশের মতো। দেশের সর্ববৃহৎ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হলো- চাকমা। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে রয়েছে গারো, মারমা, ম্রো, খেয়াং, চাক, বম, লুসাই, পাংখোয়া, ত্রিপুরা, সাঁওতাল, মনিপুরীসহ সারা দেশে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী বাস করে। যারা ভেদাভেদ ভুলে দেশের উন্নয়নে একসাথে কাজ করতে চায়।
আদিবাসী বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘আদিবাসীর স্বীকৃতি চাই। আদিবাসীর স্বীকৃতি যদি ভালোভাবে পাই তাহলে এখানে বসবাসের জন্য আরও সুবিধা হতো।’
শিক্ষা কার্যক্রম শিক্ষিকাদের একজন বলেন, ‘শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি বাচ্চার ধরণ অনুযায়ী কোন বাচ্চা কোন কাজ ভালোবাসে সে অনুযায়ী আমরা বিভিন্ন বিষয় তাদের শিখিয়ে থাকি।’
এদিকে পাহাড়ে প্রতিবছর আদিবাসী দিবস ঘিরে তিন পার্বত্য জেলা হয়ে ওঠে উত্তপ্ত। নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে উপজাতি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা খুন, গুম, অপহরণ আর চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়ে। তবে বরাবরের মতই সজাগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসন।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজগুলো করে থাকি। এখানে পর্যটকদের আনাগোনা রয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা সমন্বয় করে কাজ করে থাকি।’
এখানে দুর্গম পাহাড়ের কুয়া ও টিউবওয়েল থেকে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে হয়। তবে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও সেনাবাহিনী কর্তৃক পার্বত্য সীমান্ত সড়ক নির্মাণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে। বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণ করা হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও দুর্গম এলাকায় সেনাবাহিনীর মেডিকেল ক্যাম্প ঘুরলে দেখা যায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর উপচে পড়া ভিড়।
বাসিন্দাদের একজন বলেন, ‘এ ধরনের কাজ প্রতি মাসে বা ছয় মাসে একবার দেয়া হলে আমরা মধ্যবিত্ত শ্রেণি ভালো একটি সেবা পাবো। অনেকেই ডাক্তারের কাছে যেতে পারে না তাদের জন্য উপকার হবে।’
বাসিন্দাদের আরেকজন বলেন, ‘এখানে অনেক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, আদিবাসী শিক্ষকেরা আছেন। তারা তাদের ভাষায় কথা বলে। বাঙালি শিক্ষকেরাও আছেন তাদের সাথে আমরা বাংলায় কথা বলি।’
মেডিকেল ক্যাম্প বিষয়ে লেফটেন্যান্ট মুনিম ইসলাম সামিন বলেন, ‘এখানে আমরা রেগুলার হেল্থ-চেকআপ দিচ্ছি। ফ্রি মেডিকেশন সার্ভিস দিচ্ছি এবং মহিলাদের জন্য আলাদা গাইনি বিভাগ আছে। সেখানে গাইনি বিশেষজ্ঞ আছে। আমাদের পরিকল্পনা আছে প্রতিমাসেই এ কার্যক্রম চালানোর এতে রিমোট এলাকার মানুষ বিশেষ সুবিধা পাবে।’
বান্দারবান, খাগড়াছড়ি আর রাঙ্গামাটি তার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর বৈচিত্র্যময় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংস্কৃতির জন্য সুপরিচিত। পাহাড়, ঝরনা, ঝিরিপথ, উপত্যকা ও সমতলের এক অনবদ্য মিশেলে গঠিত এই জনপদ যেন প্রকৃতির তুলির আঁচড়ে আঁকা জীবন্ত ক্যানভাস।
এসকল পার্বত্য জেলার পর্যটন উন্নয়নে আরও কাজ করতে হবে বলে জানান, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আহ্বায়ক জেলা পর্যটন করপোরেশন।
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পর্যটন করপোরেশন আহ্বায়ক মো. সহিদুল ইসলাম সুমন বলেন, ‘খাগড়াছড়ির পর্যটন কেন্দ্রকে আধুনিকায়ন করার জন্য এবং পরিবেশবান্ধব ইকো- ট্যুরিজম ডেভেলপ করার জন্য আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। তবে এখানে কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। ইনফ্রাস্ট্রাকচারে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয় আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। ১৯৯৪ সালে শুরু হওয়া এই দিবসের মূল লক্ষ্য বিশ্বের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা করা এবং তাদের জীবনসংগ্রাম, সংস্কৃতি ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সমাজে সচেতনতা গড়ে তোলা।