সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার গভীর শোক

খালেদা জিয়া ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস
দেশে এখন
0

তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

এক শোকবার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে জাতি তার এক মহান অভিভাবককে হারালো। তার মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত।’

তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া শুধু একটি রাজনৈতিক দলের নেত্রী ছিলেন না; তিনি ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। তার অবদান, দীর্ঘ সংগ্রাম এবং জনগণের প্রতি তার আবেগ বিবেচনায় নিয়ে সরকার চলতি মাসে তাকে রাষ্ট্রের অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করে।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র, বহুদলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তার ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার আপসহীন নেতৃত্বে জাতি বারবার গণতন্ত্রহীন অবস্থা থেকে মুক্তির অনুপ্রেরণা পেয়েছে।’

শোকবার্তায় তিনি উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও জাতির কল্যাণে বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘ রাজনৈতিক যাত্রা, গণমুখী নেতৃত্ব ও দৃঢ় মনোবল দেশের রাজনীতিতে পথনির্দেশক হয়ে থাকবে। তার মৃত্যুতে দেশ একজন অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত রাজনীতিককে হারালো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন।’

তিনি স্মরণ করেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালে গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে আসা বেগম খালেদা জিয়ার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব স্বৈরশাসক এরশাদের দীর্ঘ ৯ বছরের দুঃশাসনের পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার বহু সিদ্ধান্ত দেশকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হয়েছে।’ বিশেষ করে মেয়েদের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা ও উপবৃত্তি চালু করাকে তিনি নারী শিক্ষার অগ্রগতিতে একটি মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক জীবনে বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন অত্যন্ত সফল। তিনি কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে পাঁচটি পৃথক সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত হন এবং ২০০৮ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা তিনটি আসনেই বিজয় লাভ করেন।’

শোকবার্তায় আরও বলা হয়, ১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থনৈতিক উদারীকরণের মাধ্যমে তিনি দেশের অর্থনীতির একটি শক্ত ভিত্তি গড়ে তোলেন। শেখ হাসিনার শাসনামলে বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন সংগ্রাম ও প্রতিরোধের এক অনন্য প্রতীক, যার আপসহীন ভূমিকা জাতিকে দীর্ঘ লড়াইয়ে অনুপ্রাণিত করেছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজনৈতিক সাফল্যের কারণেই বেগম খালেদা জিয়াকে চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হতে হয়েছে। মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় তাকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় এবং দীর্ঘদিন কারাবাস করতে হয়।’

বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টা তার শোকসন্তপ্ত পরিবার ও দলের নেতাকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একইসঙ্গে জাতির এই অপূরণীয় ক্ষতির দিনে দেশবাসীকে শান্ত থাকার, ধৈর্য ধারণের এবং যার যার অবস্থান থেকে তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও প্রার্থনা করার আহ্বান জানান।

এনএইচ