হাসনাত বলেন, ‘বিএনপির আওয়ামী বিষয়ক সম্পাদক রয়েছেন অনেকে। যারা আওয়ামী লীগ থেকে বেশি আওয়ামী লীগ। বিএনপির আওয়ামী লীগ বিষয়ক সম্পাদক রয়েছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম রুমিন ফারহানা। আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী, আওয়ামী লীগের ফ্ল্যাটভোগী এবং যারা গুন্ডা দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে ঠান্ডা করে দিতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘যারা একটি প্রেসক্রিপটিভ নির্বাচনের দিকে আবার যেতে চায়, আমরা এই বিএনপির আওয়ামী লীগ বিষয়ক সম্পাদকদের বলবো আপনারা জনগণের পালসকে বুঝুন, চব্বিশ পরবর্তী জনগণের পালস বুঝুন। নতুবা বাংলাদেশ আবার সংকটের দিকে যাবে।’
আরও পড়ুন:
হাসনাত বলেন, ‘আজ পুরো বাংলাদেশ যে ন্যক্কারজনক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে, এটি মূলত আগামী নির্বাচন কেমন হতে পারে, সেই নির্বাচনে এই নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কী হবে এবং আগামী নির্বাচনে বিএনপি কী ভূমিকা রাখবে; পুলিশ কী রকম দর্শকের ভূমিকা পালন করবে, সেটির আজ প্রমাণ হয়ে গেছে। আপনারা দেখেছেন, কীভাবে বিএনপির একজন নেত্রী বলছেন—আমরা চাইলে এখানে গুন্ডা নিয়ে আসতে পারতাম। অর্থাৎ গুন্ডার পৃষ্ঠপোষকতা তারাই দিয়ে আসছেন। আমরা দেখছি, নির্বাচন কমিশনের বাইরে লাঠিসোটা নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনের অফিসের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে সারা বাংলাদেশে বিএনপির যারা রয়েছে, এই গুন্ডাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে তারা কীভাবে ভোটকেন্দ্র দখল করবে, সেটির আজ ‘‘টেস্ট ম্যাচ’’ হয়ে গেছে।’
এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘হাসিনা বলতেন, ২০টি হোন্ডা, ১০টি গুন্ডা, নির্বাচন ঠান্ডা। আর যিনি হাসিনার কাছে ফ্ল্যাটের জন্য আবেদন করেছেন, যিনি আমার মনে হয় হাসিনার পতনে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছেন, তিনি হচ্ছেন রুমিন ফারহানা। আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগ থেকেও বেশি আওয়ামী লীগপন্থি যাদের মনে হয়, তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা অন্যতম। উনি সব সময় বলে থাকেন, বিগত ১৫ বছর নাকি উনি অনেক ভালো ছিলেন—অবশ্যই ভালো থাকবেন, কারণ যত ধরনের আওয়ামী সুবিধা আছে, সব ধরনের সুবিধা উনি নিয়েছেন।’
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, ‘আজকে নির্বাচন কমিশন যে ভূমিকা রেখেছে, আমরা সব সময় সেটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এসেছি। আমরা পুলিশকে দেখেছি, তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। আমরা দেখেছি, পুলিশ কীভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের নির্বাচন কমিশনে ঢুকতে বাধা দিয়েছে, আর বিএনপির নেতাকর্মীদের কীভাবে ফ্রি এক্সিট দিয়েছে! এই নির্বাচন কমিশন এখন কতিপয় দলের “পার্টি অফিস” হয়ে গেছে।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আবার কোনো মঞ্চস্থ নির্বাচনের দিকে যেতে চায় না। বিএনপির আওয়ামী বিষয়ক সম্পাদক রয়েছেন অনেকে, যারা আওয়ামী লীগ থেকেও বেশি আওয়ামী লীগপন্থি। তাদের মধ্যে অন্যতম রুমিন ফারহানা। আওয়ামী লীগের ফ্ল্যাটভোগী, সুবিধাভোগী, যারা গুন্ডা দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে ঠান্ডা করে দিতে চায়, যারা একটি সাজানো নির্বাচনের দিকে আবার নিয়ে যেতে চায়—আমরা তাদের বলবো, আপনারা জনগণের মনোভাব বুঝুন।’
এর আগে, আজ আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের ওপর জমা হওয়া আবেদনের ওপর শুনানিকালে ধাক্কাধাক্কি-হাতাহাতি-কিল-ঘুষির ঘটনা ঘটে। দুপুর ১২টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) এই শুনানি শুরু হয়। শুনানিকালে বেলা ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন
রুমিন ফারহানা বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী (জেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল) গুন্ডাপান্ডা নিয়ে ইসি ভবনে প্রবেশ করেছেন। তিনি (রুমিন ফারহানা) যখন একটা কথা বলার জন্য দাঁড়িয়েছেন, তখন তার গায়ে ধাক্কা দিয়ে তাকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। যে বিএনপির নেতা-কর্মীদের জন্য তিনি ১৫ বছর লড়াই করেছি, তারা তাকে এখন ধাক্কা দেয়। ধাক্কার বদলে তো ধাক্কা আসবেই। সেটাই হয়েছে।’
সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘খালেদা জিয়া সব সময় বলেছেন, ২০০৮ সালের আগের সীমানায় বিএনপি নির্বাচন করতে চায়। বর্তমান সীমানা একটি ফ্যাসিস্ট সরকার নিজেদের স্বার্থে নির্ধারণ করেছে, যা তারা মানেন না। তাই তারা চান, ২০০৮ সালের আগের সীমানায় ফিরে যাওয়া হোক।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসন থেকে কেটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ)-এর সঙ্গে যুক্ত করার খসড়া করেছে ইসি। এই ইউনিয়নগুলো হলো-বুধন্তী, চান্দুরা ও হরষপুর। এর পক্ষে রুমিন ফারহানা।
মারামারির বিষয়ে খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল বলেন, ‘এখানে আসলে এনসিপির সঙ্গে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার একটা তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। এটা আসলে দুঃখজনক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। এই লেভেলে এসে এই ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক।...কমিশন শুনানি নিয়েছেন। কিছু হট্টগোল হয়েছে, যেখানে আমাদের প্রতিপক্ষ অনেক ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছে, যেগুলো কোনো যৌক্তিক নয়। আমরা মনে করি, এই তিনটি ইউনিয়ন সদর বিজয়নগরের সঙ্গেই থাকা উচিত।’
খালেদ হোসেন মাহবুব বলেন, ‘বিজয়নগরের ১০টি ইউনিয়ন থেকে তিনটি ইউনিয়ন আশুগঞ্জ ও সরাইলের সঙ্গে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের খসড়া করা হয়েছে। কিন্তু বিজয়নগরের এই তিন এলাকার লোকজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও আশুগঞ্জের সঙ্গে যেতে চাচ্ছে না। তারা এই তিনটি ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সঙ্গে রাখার আবেদন জানিয়েছেন।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহর অভিযোগ, তিনিসহ তার দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। হামলা চালিয়েছেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা ও তার সঙ্গে থাকা দলীয় নেতাকর্মীরা।
রুমিন ফারহানার দাবি, আতাউল্লাহ পরিচিত মুখ নন। তিনি এনসিপি থেকে এসেছেন, না জামায়াত থেকে এসেছেন, তা তিনি জানেন না। প্রথমে তাকে ধাক্কা দেয়া হয়েছে। তারপর তো আর তার লোকজন তো বসে থাকবেন না। তার লোকজনও জবাব দিয়েছেন।
আতাউল্লাহর দেখানো একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রুমিন ফারহানা স্টেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। পেছন আতাউল্লাহ নিচে পড়ে আছেন। তাকে কয়েকজন লাথি-কিল-ঘুষি দিচ্ছেন।
আরও পড়ুন
আতাউল্লাহ বলেন, ‘শুনানিতে রুমিন ফারহানা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। কিন্তু যখন আমি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে যাই, তখন রুমিন ফারহানা আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে স্টেজ দখলে নেন। পরে তার নেতাকর্মীরা আমাকে ফুটবলের মতো লাথি দেওয়া শুরু করে। যেভাবে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ক্যাম্পাসে পিষতো, সেভাবে সবার সামনে আমাকে নিচে ফেলে পিষছে। আমার পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলেছে। হাতে আঘাত করা হয়েছে।’
নির্বাচন কমিশন তখন কী করেছে—এমন প্রশ্নের জবাবে এনসিপির এই নেতা বলেন, নির্বাচন কমিশন তখন আর কাউকে কথা বলতে দেয়নি। বিএনপি ছাড়া শুনানিতে জামায়াতে ইসলামীকেও কথা বলতে দেয়া হয়নি।
এনসিপির নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘মুশকিলের বিষয় হচ্ছে তিনি (আতাউল্লাহ) পরিচিত মুখ নন। তিনি এনসিপি থেকে এসেছেন, না জামায়াত থেকে এসেছেন, আমি জানি না। তবে উনি (আতাউল্লাহ) প্রথম, সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত একজন আমাকে ধাক্কা দিয়েছেন। তারপর আমার লোকজন তো বসে থাকবে না। আমি তো একজন মহিলা। এবং পরে যখন আমার লোকজনকে মারধর করেছে, আমার লোকজনও জবাব দিয়েছে। এটা সিম্পল।’