জোট থেকে এক দলে পরিণত হতে পারে এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলন

এনসিপি, এবি পার্টি ও রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের জোট ঘোষণা
রাজনীতি
0

রক্তাক্ত জুলাই অভ্যুত্থানের পর নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ২টি রাজনৈতিক দল এনসিপি ও এবি পার্টি। আরেকটি দল রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন নিবন্ধন পেতে এখনো আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের সমমনা দাবি করা এই ৩ দল গেলো ৭ ডিসেম্বর ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’ নামে নতুন রাজনৈতিক মোর্চার জন্ম দেয়। এবার আভাস জোট থেকে একটি দলে পরিণত হতে পারে এ ৩ রাজনৈতিক দল।

প্রকাশ্যে রাজনৈতিক জোট, কিন্তু অন্তরালে দলগুলোকে একীভূত করার চিন্তা। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী- জোটভুক্ত হলেও প্রত্যেক দল তার নিজের প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। এমন নিয়মের বেড়াজালেই জোট থেকে এক দল হওয়ার পরিণতি বেছে নিতে হবে বলে আভাস দিলেন ৩টি দলেরই দায়িত্বশীল নেতারা। সেক্ষেত্রে শাপলা কলি প্রতীকই হবে তাদের প্রথম কিংবা একমাত্র পছন্দ।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, এটা একটা উইশফুল থিংকিং। আমরা এমন করতে পারি কি না আমাদের কোনো মার্কা যদি পপুলার হয় সে মার্কাকে সামনে এনে সেটা করতে পারি কি না। আর এখন হাতে সময় খুব কম। আরপিআরজি বিধান আছে। সেখানে ব্যারিয়ার আছে। এটা আমাদের একটা চিন্তা। আমাদের রাজনীতি যেহেতু এক থাকবে আমাদের প্রতীকও এক থাকা যায় কি না সেভাবেই আমরা ভাবছি।’

রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘আমাদের মধ্যে এনসিপি সবচেয়ে বেশি আলোচিত। তাদের প্রতীক সবথেকে বেশি পরিচিত। এটা নিয়ে তারা অনেকদিন তর্কবিতর্ক করার কারণে এক ধরনের পরিচিতি পেয়েছে। তো আমাদের এখান থেকে যদি এক প্রতীক নেয়ার চিন্তা হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবে কৌশল হিসেবে সেটাকে ব্যবহারের চেষ্টা করা হবে। এটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।’

তিন দলকে এক করার মাধ্যমে রাজনৈতিক কলেবর বৃদ্ধি করতে সায় আছে এনসিপিরও। তবে, সেই প্রক্রিয়া এগোতে হবে এনসিপিকে মূল দল মেনেই। এমনটাই জানালেন এনসিপির নেত্রী শামান্তা শারমিন।

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শামান্তা শারমিন বলেন, ‘এনসিপি আসলে যে অবস্থান নিয়েছে শক্তিমত্তাকেন্দ্রিক রাজনীতি যারা ফলো করেন, সেটাই পছন্দ করেন তাদের কাছে বিষয়টা হজম হবে না। কিন্তু আমি মনে করি এনসিপি যে অবস্থান নিল সেটা বাংলাদেশের ভবিষ্যতকে শক্ত করলো।’

অবশ্য দল বিলুপ্ত করে, এক দল হওয়ার প্রক্রিয়াকে শেষ বিকল্প হিসেবে ধরে রেখেছেন জোটের বাকি দুই শরীক।

হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন এখন আরপিও সংশোধন করে আসলে এক প্রতীকে নির্বাচন করার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। এখন যদি এখানে বাধা থাকে তাহলে আরেকটা খুব কঠিন পথ আছে সেটা হলো দল বিলুপ্ত করে একসঙ্গে নির্বাচন করা।’

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মঞ্জু বলেন, ‘আমরা এ আলোচনাটা শুরু করেছি। এটা কী করা যায়। আমাদের যদি একটা সম্ভাবনা তৈরি হয় তখন আমরা এ ব্যারিয়ার বা বাধা দূর করার জন্য কী করা যায় সেটা আমরা ভাববো।’

৩ দলের রাজনৈতিক পথচলা যেমন বেশিদিনের না। তেমনি নির্বাচনের পরে তাদের গাঁটছড়া বন্ধন স্থায়ী হবে কী না, সে প্রশ্নও রেখেছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।

রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. শামীম রেজা বলেন, ‘রাজনীতির জটিল কুটিল অবস্থার মধ্যে তারা ও শরিকরা কতটুকু অবস্থান তৈরি করতে পারবেন, তার থেকে কতটুকু সুবিধা করতে পারবেন সেটা বোঝার জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে। আবার রাষ্ট্র সংস্কারের একটা অ্যাক্টিভিস্ট কার্যক্রম আছে। এখন অ্যাক্টিভিস্ট কার্যক্রম ও রাজনীতি আলাদা। এবি পার্টির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।’

জোট কিংবা একীভূত যে রূপেই সামনে আসুক না কেনো, ৩ দলের নেতাকর্মীর অভ্যন্তরীণ বোঝাপড়া ও আদর্শের মধ্যে এক হওয়াকেও প্রধান শর্ত মনে করেন তিনি।

এএইচ