এবার ডেঙ্গুর সঙ্গে চোখ রাঙাচ্ছে চিকুনগুনিয়া; বড় প্রাদুর্ভাবের শঙ্কা

পরীক্ষাগার, মশা
স্বাস্থ্য
বিশেষ প্রতিবেদন
0

এবার ডেঙ্গুর সঙ্গে চিকুনগুনিয়া মারাত্মক হারে ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আইইডিসিআর বলছে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৬০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে চিকুনগুনিয়ায়। ২০১৭ সালের মতো এবারো চিকুনগুনিয়ায় বড় ধরনের প্রাদুর্ভাবের শঙ্কার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। তবে চিকুনগুনিয়ায় সাধারণত মৃত্যু না হলেও এবার বিশ্বব্যাপী ৪৬ জনের মৃত্যু ভাবাচ্ছে সবাইকে।

মাঝেমাঝে বৃষ্টি জানান দিচ্ছে ধেয়ে আসছে ডেঙ্গুর মৌসুম। ২০২৪ সালে ডেঙ্গুতে লক্ষাধিক আক্রান্ত ও ৫৭৫ জনের মৃত্যুর সঙ্গেই মাথা চাড়া দিয়েছিল চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাস। রোগ তিনটি ভিন্ন হলে ছড়ানোর একমাত্র মাধ্যম এডিস মশা। গত বছর মৌসুমের শেষে জিকায় আক্রান্ত ১১টি রোগী শনাক্ত হলেও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৩৮ জন।

গত বছর ১৯ অক্টোবর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আইইডিসিআরে রেফারকৃত ৩৯৪ জন সন্দেহভাজন রোগীর মধ্য থেকে ১৩৮ জনকে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হিসেবে নিশ্চিত করা হয়। মাত্র দুই মাসে এতো আক্রান্তের পরই পরই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল ২০২৫ সাল হবে চিকুনগুনিয়ায় বড় প্রাদুর্ভাবের বছর। তারই ধারাবাহিকতায় শুধু বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের ল্যাবে প্রতিদিন চিকনগুনিয়া সন্দেহে ২০টির বেশি নমুনা আসছে।

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘এপ্রিলে তিনটা কেস পেয়েছি। আর এই মে তে এখন পর্যন্ত চারটা কেস পেলাম। রোগীরা যখন আমাদের কাছে স্যাম্পল দিতে আসছে, তখন জয়েন্ট পেইন নিয়েই বেশি আসছেন।’

২০১৭ সালে বাংলাদেশে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাবে ১৭ জেলায় ১৩ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছিল। গবেষণার ফলাফলে জানা যায়, আক্রান্তের প্রায় অর্ধেকের ২৮ দিন পর্যন্ত জয়েন্ট পেইনের দীর্ঘস্থায়ী উপসর্গ ছিল। আর আক্রান্তরা গড়ে ১০ দিনের বেশি কর্মহীন ছিলেন। চিকনগুনিয়ায় মৃত্যুর খবর তেমন একটা পাওয়া না গেলেও সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক সাইফুল্লাহ মুন্সি বলেছেন, ধরণ পরিবর্তনের কারণে বিশ্বে এবার ৫০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

চিকুনগুনিয়ার বাহক মশা |ছবি: সংগৃহীত

সাইফুল্লাহ মুন্সি বলেন, ‘এখন আরো অনেক গবেষণায় দেখা যায় যে, চিকুনগুনিয়ার মধ্যে অনেক রকমের জেনোটাইপ আসে। এতদিনের ধারণা যে, চিকুনগুনিয়া এমন একটা ভাইরাসের প্রণসংহারী কোনো ক্ষমতা নেই। কিন্তু এবারে এরই মধ্যে বিভিন্ন যে আউটব্রেক হয়েছে সেখান থেকে কিন্তু রিপোর্ট হচ্ছে যে প্রায় ৪৬ জন মারা গিয়েছেন।’

আইইডিসিআর বলছে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৬০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে চিকুনগুনিয়ায়। মাত্র কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্তের কিট থাকায় বেশিরভাগ নমুনা রেফার করা হচ্ছে আইইডিসিআরে। শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছেন অনেকে। তবে নমুনার চাপ বলছে চলতি বছরে চিকুনগুনিয়ায় বড় ধরনের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়তে পারে।

আইইডিসিআরের ভাইরোলজিস্ট ডা. মো. আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফ বলেন, ‘এ বছর কিন্তু ২০১৭ সালের মতো এপ্রিল থেকেই চিকুনগুনিয়া কেস আমরা পাওয়া শুরু করেছি। যেহেতু আমরা যে মিউট্রেশনটা পেয়েছি, এটা এডিসের ভাইরাসের বংশবিস্তারে সহায়তা করে সেজন্য আমরা আশঙ্কা করেছি এটা শহরগুলোতে দ্রুত বড় আউটব্রেক করতে পারে।’

ডেঙ্গু মৌসুম শুরু না হলেও মে মাস পর্যন্ত চলতি বছর প্রাণ গেছে ২৩ জনের। সবার আগে এডিস নিধনে কার্যকরী পদক্ষেপ ও পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আগেই অন্তত সব সরকারি হাসপাতালে চিকুনগুনিয়ায় কিট সহজলভ্য করার আহ্বান আইইডিসিআরের।

এসএস