সংসদ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে ঘটা করে যেসব কর্মযজ্ঞ গোছাতে হয় তার মধ্য অন্যতম ভোটার তালিকা প্রস্তুতের কাজ। যেটির সংখ্যার হিসাব বিবেচনায় থাকে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ, দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে নির্বাচন সংক্রান্ত বেশকিছু বিষয়।
সবশেষ ১০ আগস্ট বাড়ি বাড়ি গিয়ে করা ভোটার হালনাগাদের দ্বিতীয় ধাপের সম্পূরক ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করে ইসি। যেখানে নতুন করে ৪৫ লাখের বেশি নতুন ভোটার যুক্ত হলেও মৃত্যুজনিত সংখ্যা বাদ দিয়ে ২৪ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি ভোটার অন্তর্ভুক্ত হয়। এ নিয়ে দেশে মোট ভোটার ১২ কোটি ৬১ লাখের বেশি।
কমিশনের ভোটার হালনাগাদ ঘিরে দেশের জেলা-উপজেলা নির্বাচন অফিসে চলছে তৎপরতা। এতে সংশ্লিষ্ট এলাকার সম্পূরক ভোটার তালিকায় ২১ আগস্ট পর্যন্ত নেয়া হয়েছে দাবি আপত্তি। রাজধানীসহ দেশের বেশকিছু নির্বাচন অফিস ঘুরে দেখা মিলে সংশোধনীর সাথে চলছে নতুন ভোটার যুক্ত ও ভোটার স্থানান্তরের কাজও।
নতুন ভোটারদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমার জন্ম নিবন্ধনের তথ্য অনলাইন করা ছিল না, যে কারণে ভোটার হতে পারিনি। এখন অনলাইন করে আবার নতুন করে ভোটার হতে আসছি।’
অন্য একজন বলেন, ‘যেহেতু প্রথম ভোট দেবো, সেজন্য মনে একটা আনন্দ আছে।’
এবার সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণে দেশের ৪০টির মতো জায়গায় ছোট বড় পরিবর্তন আসলেও সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে গাজীপুরে। জায়গাটিতে আগে পাঁচটি সংসদীয় আসন থাকলেও এবার তা ছয়টি হতে যাচ্ছে। এবারের হালনাগাদে এ যাবত এক লাখ সাত হাজারের বেশি ভোটার নতুনভাবে যুক্তের কথা বলছে জেলা নির্বাচন অফিস।
গাজীপুরের জেলা নির্বাচন অফিসার কামরুল হাসান বলেন, ‘সংশোধন যেগুলো আমরা দেখছি, সেগুলো আমাদের ফর্মেই ঠিক রয়েছে। তারা এখন আলাদা তথ্য চাচ্ছে, সে সংশোধনটা করেছে। আমরা যাচাই বাছাই করে দেখছি যে, কাগজপত্র ঠিক থাকলে সেগুলো আমরা দিয়ে দেবো। আর নতুন ভোটার যারা এ এলাকায় ছিল না, আমাদের তথ্য রয়েছে কিন্তু ছবিও তোলেনি, ফর্ম ও ফিলাপ করেনি। তারাও আসছে, তাদেরও আমরা করে দিচ্ছি।’
এদিকে গাজীপুরের ন্যায় ঢাকার বেশ কয়েকটি নির্বাচন অফিসেও দেখা মিলে এমন হালচাল। পাশাপাশি পিছিয়ে নেই ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ কিংবা মুন্সিগঞ্জও।
ডেমরা থানা নির্বাচন অফিসার আফরোজা খাতুন বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ ধারণা করছিল হয়তো ছোটখাটো ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। এজন্য কমিশন উদ্যোগী হয়ে পুনরায় প্রুফ দেখেছে।’
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. সুমন মিয়া বলেন, ‘যদি কখনও কোথায় কোনো ধরণের সন্দেহ হয় বা কাগজ দেকে সঠিক মনে হয় না তখন আমরা ইউনিয়ন পরিষদে একটা লিখিত চিঠি দেই। পরে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলাদা চিঠি দিয়ে ভেরিফাই করলে তখন আমরা তাকে ভোটার করি।’
এদিকে দাবি আপত্তির এসব প্রক্রিয়া ২৪ আগস্ট মাঠ পর্যায়ে নিষ্পত্তি করেছে ইসি। যেখানে পরবর্তী প্রক্রিয়া শেষে আগামী ৩১ আগস্ট চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের কথা ভাবছে কমিশন।
আরও পড়ুন:
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পর্যায়ে ভোটার তালিকার সমন্বয়ে থাকা জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক সংস্থাটির ঘাটতির কথা স্বীকার করে মানুষের সচেতনতার কথা জানান। জানান, তফসিলের আগে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ১২ কোটি ৮০ লাখের মতো ভোটার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবার।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘যারা আগে নানা করণে এবং অনীহার কারণে ভোটার হতে পারেনি তাদের কিন্তু আমরা অলরেডি ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করেছি ব্যাপকভাবে। যা যা করার তার সবগুলোই করেছিলাম। কিন্তু কোনো কোনো জায়গায় কেউ কেউ যদি সেই তথ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে এবং ভোটার হতে না পারে তারা যেন এখনই ভোটার হয়ে যায়।’
এদিকে অক্টোবরের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের মূল প্রস্তুতি সম্পন্নের পরিকল্পনা নিয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত করছে ইসি। যেখানে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত, দল নিবন্ধন, সীমানা পুণঃনির্ধারণ, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন এবং আরপিও সংশোধনীসহ প্রার্থীর আচরণ বিধিমালার বিষয়ে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।