চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানি ও আমদানি করা বেশিরভাগ পণ্য পরিবহন হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে। জাতীয় এ সড়কের পূর্ণ সুবিধাপ্রাপ্তি, নিরাপদ যোগাযোগ ও যানজটমুক্ত করতে ২০১৬ সালে চার লেনে রূপান্তর করা হয়। এরপর প্রায় নয় বছর পেরিয়ে গেলেও নিরাপদ হয়নি দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়ক, উল্টো বেড়েছে দুর্ঘটনা।
মহাসড়কের ৫৪টি ইউটার্নই এখন দুর্ঘটনার হটস্পট। প্রতিটি ইউটার্ন যেন মৃত্যুফাঁদ। গেল আট মাসে কুমিল্লা অংশেই ২১৭টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৬২ জন, আহত হয়েছেন ২৫০ জনের বেশি মানুষ।
এছাড়া সার্ভিস লেন না থাকায় মহাসড়কে চলাচল করে নিষিদ্ধ থ্রি-হুইলার। উল্টো পথে বেপরোয়াভাবে চলাচল করে অন্যান্য যানবাহনও। এছাড়া সড়কের উপর অবৈধ পার্কিং ও টিকিট কাউন্টার গড়ে ওঠায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।
স্থানীয়রা জানান, দুর্ঘটনা এড়াতে নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে।
এমন অবস্থার জন্য মহাসড়কে অব্যবস্থাপনাকে দুষছেন পরিবহন মালিকরা। আর চালকদের অদক্ষতা ও বিআরটিএর যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাবে দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে মনে করেন শ্রমিক নেতারা।
বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ কবির আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কোনো নীতিমালা নেই। আপনি এখনই ৫০টি গাড়ি কিনলে পরদিন থেকে রাস্তায় চালাতে পারবেন। পৃথিবীর কোনো দেশে এরকম ব্যবস্থা নেই। প্রত্যেক জায়গায় ফিজিবিলিটি যাচাই করা হয়, যেটা আমাদের দেশে নেই। যে যখন চায়, গাড়ি নামাতে পারে।’
আরও পড়ুন:
কুমিল্লা শ্রমিক পরিবহন ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক কামরুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘আমি মনে করি অদক্ষ চালকের সংখ্যা অনেক, প্রায় ৬০ শতাংশ। আর আপনি দক্ষ চালক পাবেন কোথায়, তারা কি তাদের পারিশ্রমিক ঠিকমতো পাচ্ছে? আমাদের দক্ষ চালকরা সব বিদেশে চলে যাচ্ছে।’
সবধরনের যান চলাচল ও যত্রতত্র ইউটার্ন যেন ভেঙে দিয়েছে জাতীয় মহাসড়কে সব সংজ্ঞা। এমন অবস্থায় সড়ক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরানোর বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কুমিল্লা রিজিওন হাইওয়ে পুলিশের অ্যাডিশনাল ডিআইজি খায়রুল আলম বলেন, ‘মহাসড়কের দুপাশ দিয়ে সার্ভিস লেন থাকার কথা, সেই সার্ভিস লেন নাই। হোটেলে যাওয়ার জন্য যে ইউটার্নগুলো বানানো হয়েছে সেগুলো অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এটা করতে পারলে দুর্ঘটনাগুলো আর ঘটবে না।’
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ার কারণ হলো, আমাদের চার লেনের সড়কটি সুপরিকল্পিত নয়। এটাতে কোনো সার্ভিস লেন নেই। আমাদের দেশে কার্যত কোনো পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেই, যেটা রয়েছে থ্রি-হুইলার। তাই থ্রি-হুইলার চলার জন্য একটা সার্ভিস লেন দিতে হবে।’
নিয়ম ভাঙার খেলায় প্রায় প্রতিদিনই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঝরছে প্রাণ। বড় কোনো দুর্ঘটনার পরে স্পষ্ট হচ্ছে সড়ক ব্যবস্থাপনার ঘাটতি। এমন অবস্থায় নিরাপদ মহাসড়ক গড়তে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ কুমিল্লাবাসীর।