নাজুক অবস্থায় চলছে আর্থিক খাত; মূলধন ঘাটতিতে ২৩ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো
অর্থনীতি , ব্যাংকপাড়া
বিশেষ প্রতিবেদন
1

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর বেরিয়ে আসতে থাকে দেশের ব্যাংক-আর্থিক খাতের ১৫ বছরের ক্ষত। তবে ১ বছর পার হলেও নাজুক অবস্থায় চলছে ব্যাংকিং খাত। চলতি বছরের মার্চ শেষে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে দেশের ২৩টি ব্যাংক, যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে মূলধন ঘাটতির পরিমাণ কমলেও ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকের সংখ্যা বেড়েছে।

বিগত সরকারের আমলে নজিরবিহীন অনিয়ম আর দুর্নীতিতে খাদের কিনারায় পড়া ব্যাংকিং খাত এখনও ধুঁকছে। ছাত্রজনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর প্রকৃত চিত্র সামনে আসতে থাকে। চলতি বছরের মার্চ মাস শেষে এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে দেশের ২৩টি ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদে বলা হয়েছে, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ১৯ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিলো এক লাখ ৭১ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা ছিল। সেখানে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে মূলধন ঘাটতি কিছুটা কমলেও ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকের সংখ্যা বেড়েছে। ২৮টি ব্যাংকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঋণ পরিশোধের সময় বাড়ানোয় ঘাটতির পরিমাণ কমেছে- বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

চলতি বছরের মার্চ শেষে ছয়টি রাষ্ট্র মালিকানাধীন, ৯টি বেসরকারি ব্যাংক, সাতটি ইসলামি ধারার ব্যাংক এবং একটি বিদেশি ব্যাংকের সম্মিলিতভাবে এক লাখ ১০ হাজার ২৬০ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পড়ে। গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে চার লাখ ২০ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ডেফারেল সুবিধা নেওয়ার পরও খেলাপির প্রভাবেই ২৩টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। যার মধ্যে ডেফারেল সুবিধা পেয়েও অগ্রণী ব্যাংকের ঘাটতি বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৮২২ কোটি টাকা।

অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার বলেন, ‘ডেফারেল পদ্ধতি একটি বাজে পদ্ধতি। এটা বন্ধ করা উচিত। যারা স্টেকহোল্ডার তারা শেয়ারহোল্ডারদের প্রফিট দেখায়। ম্যানেজমেন্ট প্রফিট দেখায় প্রভিশন না করে। প্রফিট দেখিয়ে তারা বোনাস নেন। অন্য কোনো দেশে এটা নেই।’

একটি ব্যাংকের মূলধন ও তার ঝুঁকি ভিত্তিক সম্পদের অনুপাত সিআরএআর। যেখানে ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী সম্পদের হিসাব নির্ধারণ হয়। মার্চ শেষে ব্যাংকখাতে সিআরএআর দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ, যেখানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে এই হার ১০ শতাংশের ওপরে থাকা উচিত।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ঘুরে দাঁড়াতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারল্য সংকট কমানোসহ লেনদেন স্বাভাবিক করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে জুলাইয়ে ৪ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তারল্য সহায়তা দেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন:

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকটা ব্যাংকের এসেট অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেছি। দুর্বল অবস্থায় যে ব্যাংকগুলো ছিলো সেগুলো কিভাবে সংস্কার করা যায়। এটা মার্জার হতে পারে, অন্য কিছুও হতে পারে।’

বিশেষজ্ঞদের মত, ব্যাংক খাতের ঢেকে রাখা ক্ষত প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। সুযোগ এসেছে খাত সংস্কারের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইন্সটিটিউটের শিক্ষক ড. মো. ইফতেখারুল আলম বলেন, ‘কিছু অব্যবস্থাপনার কারণে কিছু চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এখানে সুশাসন ফিরিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই।’

সিএসপিএসের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘অপরাধই যেন একটা নীতি হয়ে গেছে৷ এ থেকে আমাদের মোটিভেশন দরকার। আমাদের মনিটাইজ সুপারভাইজ করা দরকার। আর যারা মনিটাইজ সুপারভাইজ করবে তারা যথাযথ কাজ না করলে শাস্তির ব্যবস্থা করা।’

সংস্কারের অংশ হিসেবে অনিয়মে জড়িয়ে পড়া শরীয়াহ ভিত্তিক ৫ ব্যাংককে একীভূত করা হচ্ছে শীগগিরই। দ্বিতীয় ধাপে বেসরকারি আরও ১১টি ব্যাংকের সম্পদের গুণগত মান যাচাই করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতি, বন্ধকি সম্পদসহ বিভিন্ন সূচকের প্রকৃত অবস্থা পর্যালোচনা শেষে আওতায় আসবে একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার।

ইএ