অগ্রণী ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি: ২০ খেলাপির কাছে আটকা ১৩ হাজার কোটি টাকা

অগ্রণী ব্যাংক ভবন, চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার
অর্থনীতি , ব্যাংকপাড়া
বিশেষ প্রতিবেদন
1

ব্যাংকিং নিয়ম না মেনে ঋণ কেলেঙ্কারিতে ধুঁকছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক। জজ ভূইয়া, তানাকা, ম্যাগপাই নিটওয়্যার, ঢাকা হাইড অ্যান্ড স্কিন ও বসুন্ধরার দুই প্রতিষ্ঠানসহ শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছে ব্যাংকটির আটকে আছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ডেফারেল সুবিধা পেয়েও অগ্রণী ব্যাংকেরে ঘাটতি বেড়ে হয়েছে পাঁচ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া তথ্য বলছে, মূলধন সংরক্ষণে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে বাংলাদেশ।

খেলাপি ঋণে জর্জরিত রাষ্ট্রীয় মালিকানার অগ্রণী ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও শীর্ষ খেলাপিদের নিয়ে বিপাকে ব্যাংকটি। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকটির মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭৯ হাজার ৫৪৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪০ দশমিক ৫৫ শতাংশই খেলাপি। যদিও গত ডিসেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ছিল ৪০ দশমিক ৫০ শতাংশ।

দুই হাজার ৪১৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নিয়ে শীর্ষে জজ ভূঞা গ্রুপ। এক হাজার ৬০ কোটি টাকার খেলাপি নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে বসুন্ধরা গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠান। তৃতীয় অবস্থানে থাকা তানাকা গ্রুপের খেলাপি ৯২৭ কোটি টাকা। পরের অবস্থানে থাকা ম্যাগপাই নিটওয়্যারের ৭২৭ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। পঞ্চম অবস্থানে থাকা ঢাকা হাইড অ্যান্ড স্কিনের খেলাপি ৬১৯ কোটি টাকা।

বিশেষজ্ঞদের মত, দীর্ঘদিনের লুটপাট, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে এখন ভঙ্গুর অবস্থায় ব্যাংকটি। আমদানি-রপ্তানির আড়ালে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার দেশের ব্যাংক খাতকে আরও দুর্বল করে তুলেছে।

অর্থনীতিবিদ হেলার আহম্মেদ খান বলেন, ‘ব্যাংকের মালিকানা নিয়ে সেই মালিকরাই যখন হাজার হাজার কোটি টাকা খান থেকে দুর্নীতি করে, ঋণ খেলাপি করে বাইরে পাঠিয়েছে, তাদের বিভিন্ন নামে বেনামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান করে এখান থেকে সরিয়েছে।’

আরও পড়ুন:

সিএসপিএসের নির্বাহী পরিচালক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘যে লোনগুলো দিয়েছে তার আলাদা আলাদা করে তার প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ পারফরম্যান্স করছে না।’

ঋণের নামে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উত্তোলন করা হলেও তার বেশিরভাগই ফেরত আসেনি বলে জানান, ব্যাংকটির বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার।

তিনি বলেন, ‘আমরা সিভিয়ার লিকুইডিটি ক্রাইসিসে আছি। ১৯৭১ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ছিল ৩০ হাজার কোটি টাকা টোটাল ল্যান্ডিং পোর্টফোলিও। সেটা এখন ৮০ কোটি দাঁড়িয়েছে। এ ১৫ বছরে আরও ৫০ কোটি টাকা দিয়েছে।’

আরও পড়ুন:

আদায় জোরদারের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ডিসেম্বরের মধ্যে অধিকাংশ শাখা খেলাপি শূন্য করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার বলেন, ‘২০২৪ এ এটা সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে। চেষ্টা করবো যতটা উঠানো যায়। তবে সন্তোষজনক টার্গেট থাকতেই হবে।’

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে ব্যাংকগুলোকে স্বনির্ভর করে তুলতে কাজ চলছে। এর মধ্য দিয়ে খেলাপ কমারও আশা তার।

আরও পড়ুন:

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘ট্রেড বেসড মানি লন্ডারিং, যেটা ঘটে থাকে ফরেন ট্রেডের ক্ষেত্রে। এ জিনিসটা কঠোরভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক মোকাবিলা করছে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রকাশিত আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর মূলধন সংরক্ষণে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে বাংলাদেশ।

এসএস