ভিন্ন প্রেক্ষাপটের ডাকসু নির্বাচন, বিজয়ীদের শিক্ষার্থীবান্ধব হওয়ার চ্যালেঞ্জ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি
শিক্ষা , ক্যাম্পাস
বিশেষ প্রতিবেদন
0

গেলো ৩৪ বছরে দ্বিতীয়বার মাঠে গড়াচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। তাই শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশার পারদ আকাশচুম্বী। ছাত্ররাজনীতির গতিপ্রবাহ বিশ্লেষণ করেন, এমন শিক্ষকদের অভিমত, বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানে উন্নীত করতে ডাকসু নেতাদের ভূমিকা সীমিত। আশা করেন, এবার বিজয়ীরা নিজেদের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকাশে ভূমিকা রাখবেন। আর ডাকসুর সাবেক নেতারা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর বদলে গেছে শিক্ষার্থীদের চাহিদা। এবার সব রাজনৈতিক আদর্শের সহাবস্থান নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন সম্ভাবনার ক্ষেত্র বানাবেন ডাকসুর বিজয়ীরা।

আসছে ৯ সেপ্টেম্বর ঢাবি শিক্ষার্থীরা রায় দেবেন, কে হবেন ছাত্র সংসদের পরবর্তী এক বছরের কর্ণধার। খাবারের মানোন্নয়ন, পরিবহন ও আবাসন সংকট নিরসণসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ভোটারদের চাওয়ার প্রেক্ষিতে সেসব পূরণে প্রার্থীরা প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন।

তবে ডাকসুর নেতারা কেবল অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিরসণে সীমাবদ্ধ থাকবেন, তেমনটা মনে করেন না ডাকসুর সাবেক ভিপিরা। ভিন্ন দুই শতাব্দীতে ভিপি পদে দায়িত্ব পালন করাদের অভিমত, অতীতে সরকার ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের প্রভাবে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি ডাকসুর নেতারা। এবার ভিন্ন সমীকরণ হবে বলেই মনে করেন তারা।

ডাকসুর সাবেক সহ-সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এখন দেখছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি, টিআইবি, অর্থনৈতিক কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠান— তারা বলে কী কী হওয়া উচিত আর কী কী হয়নি, এক ধরনের দিকনির্দেশনা দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তো সবচেয়ে বড় গবেষণা কেন্দ্র হওয়ার কথা, ডাকসু সবচেয়ে বেশি এনলাইটেন্ড থাকার কথা, তারা যখন বলবে এরকম কথা জায়গায় থেকে তখন সেটা পুরো জাতির জন্যএকটা দিকনির্দেশনা হতে পারে।’

ডাকসুর সাবেক সহ-সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘একাডেমিক কার্যক্রমে একটা সহায়ক ভূমিকা রাখবে, যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা রিসার্চের সুযোগ পায়, রিসার্চে যেন আর্থিক সুযোগ-সুবিধা থাকে। বিভিন্ন মাধ্যম বা অ্যালামনাইদের মাধ্যমে তারা স্পন্সর কালেক্ট করতে পারে।’

তবে ডাকসু নেতাদের এই পরিবর্তন করার সাধ ও সাধ্যের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান নিয়েও আছে নানা মত। ডাকসুর গঠনতন্ত্রে ৪টি লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও ৮টি কাজ ছাড়াও কল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে সদস্যদের সমাজসেবার মনোভাব জাগিয়ে রাখার কথা বলা আছে।

এর মধ্যে আছে কমনরুম ব্যবস্থাপনা, সামাজিক সমাবেশ, বক্তৃতা, বিতর্ক ও অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন, বছরে অন্তত একবার জার্নাল প্রকাশ, শিক্ষা সম্মেলনে প্রতিনিধি পাঠানো আর পত্রিকা সরবরাহের মতো কাজ।

আরও পড়ুন:

এমন প্রেক্ষাপটে, বিজয়ী প্রার্থীর নিজের নেতৃত্বের বিকাশে ভূমিকা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের করতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে কতটুকু সক্ষম সে বিষয়ে ভিন্নমত জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন শিক্ষক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী মাহবুবুল হক বলেন, ‘শিক্ষার্থী সংসদগুলোকে শিক্ষার্থীদের মনোযোগের উপলক্ষ করা দরকার, এটাকে যেন জাতীয় পর্যায়ে টানা-হেঁচড়া করে আমরা যেন তাদের শিক্ষার্থীদের মনোযোগের বাইরে না নিয়ে যাই। তাদের মনে রাখতে হবে যে তারা ফুল টাইম স্টুডেন্ট, তাদের প্রধান কাজ হলো পড়াশোনা করা, পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা দেখা, যেটা আইনগত।’

ডাকসুর চীফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ‘লিডারশিপ বললে শুধু পল্টনে গিয়ে বক্তৃতা দেবে— এটা না তো, বরং যার যার ফিল্ডে গুণগত নেতৃত্ব দেয়াই হলো লিডারশিপ।’

তবে আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের নেতৃত্ব উঠে আসবে এমন সম্ভাবনা থেকে সাবেক ভিপিরা মনে করেন, ডাকসুকে ‘সেকেন্ড পার্লামেন্ট’ হিসেবে কার্যকরী করতে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেবেন নির্বাচিতরা।

নিয়মিত নির্বাচন আয়োজন করলে ডাকসু আরও কার্যকরী হবে। ফিরে আসবে সুস্থ রাজনৈতিক ধারা। এমনটাই প্রত্যাশা সাবেক ছাত্রনেতাদের।

এসএইচ