পারিবারিক কলহ, প্রেমে ব্যর্থতা, এলাকার বিশৃঙ্খলা কিংবা কারখানার শ্রমিকদের ধর্মঘট; এসবের সমাধানকারীর চরিত্রে কলকাতার সিনেমায় দেখা যেত রঞ্জিত মল্লিককে। তখন দর্শকরা তাকে ডাকতেন মুশকিল আসান নামে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে সেই 'মুশকিল আসান' চরিত্রটা যেন মেহেদী হাসান মিরাজ! দলে কেউ সংবাদ সম্মেলনে আসতে চাচ্ছে না, মিরাজকে পাঠিয়ে দাও।
উদ্বোধনী ব্যাটার নেই, অধিনায়ক পাঠিয়ে দিলেন মিরাজকে। ২০১৮ এশিয়া ফাইনালে এনে দিয়েছিলেন দারুণ শুরু।রাওয়ালপিন্ডিতে যখন একে একে সাজঘরে সবাই, তখন ব্যাটে হাল ধরেন তিনিই। বিপদে দলের পাশে থাকা; এ যেন তার অভ্যাসে পরিণত। এবার সেই মিরাজই এখন বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের নতুন অধিনায়ক।
আগামীকাল থেকে কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শুরু হচ্ছে তার অধিনায়কত্বের নতুন অধ্যায়। তবে নেতৃত্বে তিনি একেবারেই নতুন নন। ২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দলনেতা ছিলেন মিরাজ।
ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিয়মিত নেতৃত্ব দিয়েছেন, দেশের বাইরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও সামলেছেন জাতীয় দলকে। বিপিএলে খুলনার অধিনায়ক ছিলেন মিরাজ। কঠিন সমীকরণ মেলানো সেই দলকে নিয়েই পৌঁছে গিয়েছিলেন প্লে-অফে।
বয়স ২৮ পেরোতে বাকি মাস চারেক, অনেকে তা নেতিবাচক হিসেবে দেখলেও কেউ কেউ উদাহরণ টানছেন শুবমান গিলের সঙ্গে। প্রোটিয়াদের সাবেক অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ ২২ বছর বয়সেই পেয়েছিলেন নেতৃত্ব। আবার ২০১১ সালে ঘরের মাঠে ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান।
তখন তার বয়সও ছিল ২২। তাছাড়া বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা থাকায় পরিণত মানসিকতা আর নেতৃত্বের গুণে মিরাজ পিছিয়ে নন একটুও। পরিকল্পনা ও কৌশলে অনেক পরিণত ও চিন্তাশীল।
তবে আত্মবিশ্বাস যখন মাত্রা ছাড়ায়, তখন সেটাই হয়ে ওঠে পরীক্ষা। নিজের বলে রিভিউ নেওয়ার প্রবণতা তো আছেই, এবার সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে অধিনায়ক হিসেবেও। এই জায়গাতেই মিরাজকে পাস করতে হবে ধৈর্যের পরীক্ষায়। বিসিবি আপাতত তাকে দিয়েছে এক বছরের দায়িত্ব।
তার সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পরের বছরেই ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ৮ মাস ওয়ানডেতে জয় দেখে না বাংলাদেশ। সেই চ্যালেঞ্জও আছে নতুন ওয়ানডে অধিনায়কের সামনে। তবে মুশকিলে ভরসার নাম যদি হয় মিরাজ, তাহলে সেই বিশ্বাসটা আরও দীর্ঘ হোক, আরও স্থায়ী হোক।