লাল-সবুজের টানে দেশে ফেরা; কোর্টে নামছেন আয়মান ও লিপটন

জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে প্রবাসী দুই শাটলারের স্বপ্নযাত্রা

অন্য সব খেলা
এখন মাঠে
0

লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে দেশে ফিরেছেন প্রবাসে বেড়ে ওঠা দুই শাটলার আয়মান ইবনে জামান ও মোস্তাফিজুর রহমান লিপটন। আসন্ন জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপের মাধ্যমে কোর্টের লড়াইয়ে নামছেন তারা। এ যাত্রায় পাশে আছে পরিবার, নজর রাখছে ফেডারেশনও। এ শুধু খেলার গল্প নয়, এই ফেরা বিশ্বাস আর বাংলাদেশকে ভালোবাসার গল্প।

ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় আয়মান ইবনে জামান বলেন, ‘আমি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেছি। তারপর আমি এখন ব্যাডমিন্টনের সঙ্গে পুরোপুরি জড়িত। বাংলাদেশে আমি আমার পুরো ফোকাস দিতে চাই, দেশের জন্য কিছু একটা করবো।’

এই ঘাম, এই ছুটে চলা শুধু একটা শটের জন্য নয়, এটা একটা স্বপ্নের জন্য। কোর্টে প্রতিটি দৌড়, প্রতিটি ঝাঁপ যেন বলে দেয়.আমি ফিরেছি, দেশের জন্য খেলতে।

ছবিতে যাকে দেখছেন, তিনি আয়মান ইবনে জামান, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী একজন প্রতিভাবান ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। জন্মভূমির ডাক আর লাল-সবুজে খেলার স্বপ্নে দেশে ফিরেছেন তিনি। এখন অনুশীলনে মগ্ন, লক্ষ্য একটাই বাংলাদেশ জাতীয় দলে জায়গা করে নেয়া।

আয়মান ইবনে জামান বলেন, ‘আমি আবারো চ্যাম্পিয়নশিপ জিততে চাই। আমি জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হতে চাই আবার। এটাই আমার লক্ষ্য। এরপর আমি আন্তর্জাতিকের দিকে ফোকাস করতে চাই। আন্তর্জাতিক রেজাল্ট যখন আসবে তখন আমাদের দেশের ব্যাডমিন্টনটা অনেক উপরে উঠবে।’

শৈশবে বাংলাদেশেই ব্যাডমিন্টনে হাতেখড়ি। এরপর পরিবারের সাথে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানকার প্রতিযোগিতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন দক্ষ খেলোয়াড় হিসেবে। তবে মন পড়ে ছিল এখানেই—লাল-সবুজের জার্সিতে কোর্ট মাতানোর তীব্র তৃষ্ণা নিয়ে। অন্যদিকে আরেক খেলোয়াড় লিপটনও এসেছেন প্রবাস জীবন ছেড়ে দেশের মাটিতে খেলার নেশায়।

লিপটন বলেন, ‘খেলাকে ভালোবাসি এজন্য। বাংলাদেশের হয়ে খেলাটা আসলে অনেক বড়কিছু। আমি কাতারে থাকি। দোহায় একটা অ্যাকাডেমিতে কোচ হিসেবে আছি। অনুশীলন করাই ওখানে। আমার উনাদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট করা আছে যে, বাংলাদেশের হয়ে দি কোনো ইভেন্টে জায়েন্ট করি তাহলে ওরা আমাকে ছুটি দেবে।’

আয়মান ইবনে জামান বলেন, ‘আমি আমার দেশকে ভালোবাসি। এখান থেকেই আমার খেলা শুরু করেছিলাম। এখন আমার যে পারফরম্যান্স, সেটা আমি দেশের হয়ে খেলতে চাই। আমি ইউএসএ এর হয়ে খেলতে চাই না। যেখানে আমি জন্মেছি সে দেশের হয়ে খেলতে চাই।’

সচরাচর বাংলাদেশে পেশাদার ব্যাডমিন্টনে খেলাকেই যেখানে বাঁকা চোখে দেখা হয়, সেখানে প্রবাসে নিশ্চিত ভবিষ্যৎ পিছে ছেড়ে দেশে ফেরাকে কীভাবে দেখছেন আয়মানের বাবা?

তিনি বলেন, ‘আমার যে প্রাণের বাংলাদেশ, এটাকে আমরা সবাই ভালোবাসি। যুক্তরাষ্ট্রে আয়মান করতটুকু করতে পারলো সেটা ইউএস সরকার সেই স্বীকৃতি দেবে না। আয়মান ওটাতে পরিতৃপ্ত হবে না। আমি মনে করি বাংলাদেশের এসে নিজের মাটিতে, এই মাটির সন্তান হিসেবে বাংলাদেশকে সে যদি উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে সে ওই সিদ্ধান্তটাই নিয়েছে। তার এ সিদ্ধান্তে আমি গর্বিত।’

ফেডারেশনও প্রবাসী খেলোয়াড়দের নিয়ে মনোযোগী। তাই তো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ব্যাডমিন্টন কর্তার কণ্ঠে।

বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক রোসেল কবির সুমন বলেন, ‘প্রবাসীরা যে আসছে, আগ্রহী হচ্ছে। এটা আমাদের ফেডারেশনের জন্য একটা সাফল্য। যেরকম ফুটবলে হয়েছে। ব্যাডমিন্টনে এমন দুইজন এসেছে, আরও আসবে কি না আমি সঠিক বলতে পারি না। তবে এরকম সার্কুলার দিয়েছি যে যারা খেলতে আগ্রহী তারা সবসময় ওয়েলকাম। ন্যাশনালসের পর একটা ক্যাম্প শুরু করছি ছয় মাসের জন্য, সেখানে আমরা চেষ্টা করছি ইন্দোনেশিয়া থেকে একটা কোচ আনার জন্য। তার অধীনে ছয়মাস এটা অনুশীলন করবে সাফ গেমসের জন্য।’

আগামী ১৪ জুলাই শুরু হবে জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ। প্রথমবারের মতো টুর্নামেন্টে প্রাইজমানি থাকছে ১০ লাখ টাকা।

এসএস