উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যখন নিজেই রোগী!

চাকরি হারানোর ভয়ে নিশ্চুপ সবাই

টাঙ্গাইল
মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে কাজ করছেন নার্সরা
স্বাস্থ্য
এখন জনপদে
0

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন নিজেই রোগী। কর্তৃপক্ষের অবহেলা, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে সরকারি হাসপাতাল এখন রোগীদের ভোগান্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে। এসব বিষয়ে হাসপাতালে ছবি তুলতে গেলে বাধা দেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তা (টিএইচও) আব্দুস সোবাহান।

সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে বহির্বিভাগের রোগী ও তাদের স্বজনরা চিকিৎসকের অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আছেন বলে জানা যায়।

বহির্বিভাগের এনসিডি কর্নারের কার্ডধারী রোগীরাও ফিরে যাচ্ছেন ওষুধ না পেয়ে। হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় ওঠার সিঁড়ি ময়লা-আবর্জনায় ভরা। রোগীর পাশেই মেঝেতে ময়লার দাগ, দেয়ালের কোথাও কোথাও কফ, থুতু ও পানের পিকের দাগ।

পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডের টয়লেট ব্যবহার অনুপযোগী। রাতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর হাসপাতালে ভর করে ভুতুড়ে পরিবেশ। ফলে বাধ্য হয়ে মোবাইলের টর্চ জালিয়ে চিকিৎসা দিতে হয় নার্স ও চিকিৎসকদের। হাসপাতালের পিছনে ময়লা ও জমাট বাঁধা দুর্গন্ধ পানির কারণে মশার উপদ্রপও বেড়েছে। ওয়ার্ডের অধিকাংশ ফ্যান নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।

তবে এসব বিষয়ে চাকরি হারানো ও বদলির ভয়ে চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারীসহ হাসপাতালের কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নার্সরা জানান, হাসপাতালের জেনারেটর রয়েছে তা চালানো হয় না। বিদ্যুৎ চলে গেলে গরমে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় রোগীদের। অন্ধকারে রোগীদের ওষুধ দেয়া থেকে শুরু করে জরুরি সেবা ব্যাহত হয়। তখন মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে কাজ করতে হয়।

জানা যায়, ভূঞাপুর ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে উপজেলার মানুষ ছাড়াও আশপাশের তিনটি উপজেলার মানুষও সেবা নিতে আসে। হাসপাতালে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রয়কৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এক্স-রে ফিল্ম না থাকার অজুহাতে সেটিও বন্ধ রয়েছে।

আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিন থাকলেও সেটিও ব্যবহার হয় না। হাসপাতালের জুনিয়র ও সিনিয়র কনসালট্যান্ট থাকলেও তারা নিয়মিত বহির্বিভাগে বসেন না। সপ্তাহে দুইদিন হাসপাতালে আসলেও সেটি নির্ধারিত সময়ের পর আসেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হাসপাতালে আসা কাজল বলেন, ‘অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে দুইদিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। আসার পর থেকেই খাবার ও পানি কম খাচ্ছি যাতে টয়লেটে না যেতে হয়। টয়লেটে গিয়ে এখন নিজেই অসুস্থ হওয়ার উপক্রম। এখানে সেবা বলতে কিছু নেই।’

বড়শিলা থেকে আসা রোগীর স্বজন সাজেদা বেগম বলেন, ‘এই হাসপাতাল নিজেই অসুস্থ, দুর্বল। ওয়ান টাইম টেপটা পর্যন্ত বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনে এনেছি। তুলা থাকতেও বের করতে চায় না নার্সরা। নাতিনকে হাসপাতালে আনার পর দুই আড়াই ঘণ্টা কারেন্টের কোনো খবর নেই। পরে ছেলেকে বলে বাড়ি থেকে চার্জার ফ্যান এনেছি।’

হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, হাসপাতালের পরিবেশ এতটাই নোংরা যে এখানে এক মিনিট টিকে থাকা কষ্টকর। নিরুপায় হয়ে রোগী ও স্বজনেরা কোনো রকমে এখানে সময় পাড় করছেন।

ভর্তি থাকা রোগী মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী বলেন, ‘হাসপাতালের টয়লেটে যাওয়ার মত অবস্থা নেই। পুরুষদের টয়লেটে কমন একটি লাইট থাকলেও প্রতিটি টয়লেটে আলাদা কোনো লাইটের ব্যবস্থা নেই। ফলে মূল দরজা বন্ধ করে প্রয়োজন সারতে হয়।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) খাদেমুল ইসলাম বলেন, ‘সমস্যা রয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় সব কাজ করা সম্ভব না। কেউই শতভাগ কাজ করতে পারি না, আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবাহান বলেন, ‘ছবি তুলতে হলে অনুমতি লাগবে। সমস্যার কথা কেউ না জানালে সমাধান কিভাবে করবো। এছাড়া লোকবল সংকট রয়েছে।’

এএইচ