নেত্রকোণায় খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে বুনো হাতির পাল

লোকালয়ে আসা বুনো হাতির পাল
এখন জনপদে
0

নেত্রকোণার কলমাকান্দা সীমান্ত এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে প্রবেশ করে বুনো হাতির পাল। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি হলেও পরিবেশ সংশ্লিষ্টরা বলছেন সীমান্তে হাতি আসাটাই স্বাভাবিক। তবে সীমান্তের জাগিরপাড়া এলাকায় জমির কাঁচাপাকা ধান খেয়ে ফেলার অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। ফলে বুনো হাতির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সীমান্ত এলাকার জাগিরপাড়া, হাতিবেড়, চন্দ্রডিঙ্গা, বেতগড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড় থেকে প্রতি বছর খাদ্যের সন্ধানে বুনো হাতির পাল বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে এসে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। ভাঙচুর করে বাড়িঘর, গাছপালা ধ্বংস ছাড়াও হাতির আক্রমণে এই অঞ্চলে হতাহতের ঘটনাও ঘটে।

গত সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভারতীয় সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নের জাগিরপাড়া এলাকায় চলে আসে ১৫-২০টি বুনো হাতির একটি দল। পরে স্থানীয় লোকজন টর্চ লাইট, লাঠিসোটা ও মশাল জ্বালিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টায় পালটিকে তাড়াতে সক্ষম হয়।

বর্তমানে কাঁচা-আধাপাকা ধানসহ বিভিন্ন ফসল নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন পাহাড়ি এলাকার মানুষ। কারণ, দিনের বেলায় হাতির পালটি পাহাড়ের টিলায় অবস্থান করলেও রাতে দলবেঁধে লোকালয়ে নেমে আসে।

এদিকে হাতির চলে আসার বেশ কিছু ভিডিও এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। হাতির পাল তাড়ানোর জন্য উচ্চ শব্দের বাঁশি, লেজার লাইট এবং টর্চ লাইট ব্যবহারের ব্ষিয়টিও ভিডিওতে দেখা গেছে।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করা স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য এনিমেলস অফ সুসংয়ের উপদেষ্টা আলপনা বেগম জানান, সীমান্ত পাহাড়গুলোতে নির্বিচারে গাছপালা ধ্বংস করায় খাদ্যের সন্ধানে প্রায়ই বিভিন্ন প্রাণী লোকালয়ে চলে আসছে। এর মধ্যে প্রতিবছর বিশেষ করে ধানের মৌসুমগুলোতে হাতির পাল জেলার সীমান্তবর্তী দুই উপজেলার দুর্গাপুর এবং কলমাকান্দায় চলে আসে।

২০২১ সাল থেকে এসব হাতির পাল সীমান্তে আসলেও ২০২৪ সালে কোনো হাতি সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে আসেনি। কিন্তু এ বছর হঠাৎ করে আবারো হাতিগুলো সীমান্তে চলে এসেছে। তবে হাতির চোখে লেজার লাইট কিংবা টর্চ লাইট ধরে রাখায় হাতি আরো ক্ষিপ্ত এবং আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে। কিন্তু স্থানীয়রা এভাবেই বারবার লাইট ধরে রেখে কিংবা উচ্চ শব্দের ফটকা (শব্দ বোমা) হাতিদের দিকে ছুড়ে মেরে হাতিদের ক্ষিপ্ত করে তুলছেন।

ফলে বুনো হাতি দল গ্রামগুলোতে আক্রমণ করছে। বিশেষ করে মা হাতিদের সাথে শাবক থাকায় আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এছাড়াও সীমান্ত গ্রামের বাসিন্দা ছাড়াও দূর দূরান্ত থেকে উৎসুক জনতা ভিড় করায় হাতির আক্রমণ বাড়ার অন্যতম কারণ বলেও মনে করেন তিনি।

পাঁচ গাঁও গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘প্রতি বছরই ধানের মৌসুমে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড় থেকে হাতির পাল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। পালগুলো দিনে পাহাড়ের টিলায় অবস্থান করে। রাতে নেমে এসে ফসলের মাঠে তাণ্ডব চালায়। জমির ফসল ও হাতির তাণ্ডব ঠেকাতে স্থানীয় লোকজন রাতে মশাল, টর্চ লাইট ও লাঠিসোটা নিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করছেন।’

জাগিরপাড়া গ্রামের সুদীপ্ত হাজং বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন শত চেষ্টা করেও কোনোভাবেই বুনো হাতির দলকে আটকাতে পারছে না। এসব হাতি একবার যে ক্ষেত লক্ষ্য করে, তা বিনষ্ট করবেই।’ হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এই নেতা।

রংছাতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান খান পাঠান বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে হাতির আক্রমণ। হাতির তাণ্ডবে দিশেহারা এ অঞ্চলের মানুষ। প্রতি বছরই ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে এসব বুনো হাতির পাল। দিনের বেলায় টিলায় থাকলেও রাত হলেই লোকালয়ে নেমে আসে। সীমান্তে হাতি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’

এদিকে বন বিভাগের দুর্গাপুর রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা মজনু প্রামাণিক সীমান্তে হাতি আসার ব্যাপারে কোনো কিছুই জানেন না বলে জানেন।

জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, সীমান্তবর্তী এলাকায় বুনো হাতি চলে আসার বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও সীমন্ত এলাকা গুলোতে যেন কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয় সেজন্য গ্রামগুলোতে সচেতনতা মূলক প্রচারণা চালানো হবে‌।

এএইচ